পেশি শক্তির কাছে হারলেন মহিতুল by আশরাফুল ইসলাম

ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতির সঙ্গে মিলছে না প্রদানকৃত ভোটের হিসাব। কোন কোন কেন্দ্রে প্রদানকৃত ভোট ছাড়িয়ে গেছে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটকেও।
আলোচিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের ফলাফল পর্যালোচনা করে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাস্তব ভোটচিত্রের বিপরীতে এটি বড় ধরনের গরমিল- যা ভোটগ্রহণের দিন বিদ্রোহী প্রার্থীর  অভিযোগকে কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত করছে। তাছাড়া ভোটগ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৬ হাজার সদস্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুললেও ভোট কেন্দ্রের ভেতর তাদের তেমন কোন নজরদারি চোখে পড়েনি। ভোটচিত্রের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে তারা মনে করছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম ভোটের হিসাবে নয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দলীয় প্রভাবের কাছেই পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মোট ১১৮টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণ শুরুর সময়ে ভোট কেন্দ্র ছিল কার্যত ফাঁকা। সরজমিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়লেও বেশির ভাগ কেন্দ্রেই উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় কম। বেলা ১২টায় ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের ডুইয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছাড়া আর তেমন কোন কেন্দ্রে সে রকম লাইন চোখে পড়েনি। ওই কেন্দ্রের মোট  ৩০০৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ১৬১০ জন ভোটার। যা মোট ভোটের শতকরা প্রায় ৫৪ ভাগ। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী, এ আসনের মোট ২ লাখ ৭৭ হাজার ১২৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৭ জন। ভোট প্রদানের হার শতকরা প্রায় ৫৮ ভাগ। সাধারণ হিসাবে নির্বাচন কমিশনের এ হিসাব ভোটার উপস্থিতির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা হাতেগোনা কয়েকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী যে ৫৭টি কেন্দ্রে তার এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন, সেসব কেন্দ্রের হিসাব অন্যরকম। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে রাত সাড়ে ১০টায় সর্বশেষ ফলাফল ঘোষণার সময় ১১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৬টি কেন্দ্রের ফলাফল দিতে পারলেও তখন পর্যন্ত দু’টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা দিতে পারেননি। সে দু’টি কেন্দ্র হচ্ছে, মিঠামইন উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বৈরাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও বাহেরচর মাদরাসা কেন্দ্র। রাতভর অপেক্ষার পর গতকাল  সকাল ১১টার দিকে সে দু’টি কেন্দ্রসহ মোট ১১৮টি কেন্দ্রের সব ফলাফল প্রদান করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। বিলম্বে এবং সর্বশেষ আসা এ দু’টি কেন্দ্রের মধ্যে বৈরাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নৌকা প্রতীকে পান ১০৩৫ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম পান ২৪২ ভোট। প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী, ওই কেন্দ্রের মোট ১৭১৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন এক হাজার ২৯৬ জন ভোটার। ভোট প্রদানের হার শতকরা প্রায় ৭৬ ভাগ। ওই কেন্দ্রে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন মোট এক হাজার ২৭৩ জন ভোটার। অন্যদিকে বাহেরচর মাদরাসা কেন্দ্রে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নৌকা প্রতীকে পান ৮৭২ ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম পান মাত্র ৩৯ ভোট। ওই কেন্দ্রের মোট ১৪৬০ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৯১৬ জন ভোটার। যা শতকরা প্রায় ৬৩ ভাগ। রিটার্নিং অফিসার প্রদত্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ দু’টি কেন্দ্রের বাইরে আরও অন্তত ১৫টি কেন্দ্রে প্রদানকৃত ভোটের হার ছিল অস্বাভাবিক রকমের। অষ্টগ্রাম উপজেলার খয়েরপুর আবদুল্লাপুর ইউনিয়নের উত্তর আবদুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ১৪৯৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ১২৩৯ জন, যা শতকরা প্রায় ৮৩ ভাগ। এর মধ্যে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নৌকা প্রতীকে পান ১২০১ ভোট পান এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম ফুটবল প্রতীকে পান মাত্র ৩৭ ভোট। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১০৮৯ জন ভোটার। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় উপনির্বাচনে প্রদানকৃত ভোট বেড়েছে ১৫০টি। একই ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ২৬২২ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২১০৮ জন, যা শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি। এই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক পায় ২০৮১ ভোট এবং ফুটবল প্রতীক পায় মাত্র ২৩ ভোট। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১৮৩১ জন ভোটার, সে তুলনায় উপনির্বাচনে ২৭৭ জন বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। একই ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর ইদ্রিস আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই হাজার ২৪৫ জন মোট ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৭২০ জন, যা শতকরা প্রায় ৭৭ ভাগ। এই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক পায় ১৫৮৪ ভোট, বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় ১৩২ ভোট। মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের আতপাশা মামুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২১৭৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১৬০৯ জন, যা শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগ। এই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ১৫১৩ ভোট, অন্যদিকে ফুটবল প্রতীক পেয়েছে মাত্র ৯১ ভোট। একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৩০৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ১৭৬৮ জন, যা শতকরা প্রায় ৭৭ ভাগ। এখানে নৌকা প্রতীক ১৬৭২ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় আগের কেন্দ্রের সমান ৯১ ভোট। একই উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের কুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৩৬৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১০২৩ জন, যা শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ। এখানে নৌকা প্রতীকের পাওয়া ৯৭২ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় মাত্র ৪৭ ভোট। একই ইউনিয়নের তেলিখাই কান্দিপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২১৬৭ ভোটের মধ্যে ভোট গৃহীত হয় ১৫৪৫টি, যা শতকরা ৭১ ভাগেরও বেশি। এখানে নৌকা প্রতীকের পাওয়া ১৪৪৯ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় মাত্র ৯১ ভোট। একই উপজেলার মিঠামইন সদর ইউনিয়নের ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২২৭০ ভোটের মধ্যে গৃহীত হয় ১৬১২ ভোট, যা শতকরা ৭১ ভাগের চেয়ে কিছু বেশি। এই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পাওয়া এক হাজার ৩৩৯ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় ২৫৪ ভোট। কেন্দ্রটিতে সকাল ১০টায় গিয়ে নারী ভোটার একটি ছোট লাইন ছাড়া পুরুষদের লাইনে কোন ভোটার পাওয়া যায়নি। প্রথম দুই ঘণ্টায় সেখানে ভোট পড়েছিল মাত্র ১৮৯টি। একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের নিজ কেন্দ্রে দুই হাজার ৩৩৬ জন ভোটারের মধ্যে গৃহীত হয় ১৬৯৮ ভোট, যা শতকরা প্রায় ৭৩ ভাগ। সকাল সাড়ে ৯টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, তখন পর্যন্ত মাত্র ১৫৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সে সময় পুরুষ ও নারী দুই লাইনে জনা দশেক ভোটার উপস্থিত ছিলেন। বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন এই কেন্দ্রে কম ভোটার উপস্থিতির খবর দিনভর প্রচার করে। এই কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থী কোন এজেন্ট দেননি। সেখানে নৌকা প্রতীকের পাওয়া ১৬০০ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় ৯৫ ভোট। অন্যদিকে ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের প্রজারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৪১৮ জন ভোটারের মধ্যে গৃহীত হয় এক ১৯৯৫ ভোট, যা শতকরা প্রায় ৮৩ ভাগ। এখানে নৌকা প্রতীকের পাওয়া ১৯০০ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় মাত্র ৭৫ ভোট। একই ইউনিয়নের বড়বাড়ী কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে ২১৪৫ ভোটের মধ্যে গৃহীত হয় ১৬৩৭ ভোট, যা শতকরা ৭৬ ভাগেরও কিছু বেশি। এখানে নৌকা প্রতীকের পাওয়া ১৬২২ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় মাত্র ১০ ভোট। একই ইউনিয়নের লাইমপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৫৮৫ ভোটের মধ্যে গৃহীত হয় ২০২৭ ভোট, যা শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ। এখানে নৌকা প্রতীকের পাওয়া ১৭১৭ ভোটের বিপরীতে ফুটবল প্রতীক পায় ২৯৬ ভোট। একই উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের উয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৮৩১ ভোটের মধ্যে গৃহীত হয় ২৯৭১ ভোট, যা শতকরা প্রায় ৭৮ ভাগ। এখানে নৌকা প্রতীক ২৫৯৫ ভোট এবং ফুটবল প্রতীক ৩৬০ ভোট পায়। বিগত সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ১৮৭ জন বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন এ কেন্দ্রে। একই ইউনিয়নের মুদিরগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৯৭৫ জন ভোটারের মধ্যে গৃহীত হয় ১৬৩৬ ভোট, যা শতকরা প্রায় ৮৩ শতাংশ। বাদলা ইউনিয়নের বর্শিকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৭৫২ জন ভোটারের মধ্যে গৃহীত হয় ৩৪৪৯ ভোট, যা প্রায় ৭৩ শতাংশ। এসব কেন্দ্রে উপস্থিতির সঙ্গে গৃহীত ভোটের অস্বাভাবিক হিসাব নিয়ে খোদ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার গতকাল বিকালে মানবজমিনকে বলেন, ২/১টি অস্বাভাবিক ভোটের বিষয়টি আমার নজরে আসার পর সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি ঠিক আছে বলেই আমাকে জানিয়েছেন। বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম মানবজমিনকে বলেন, এসব কেন্দ্রে ভোট লুটের মহোৎসব হয়েছে। প্রশাসন সেখানে নির্বিকার ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এমন নির্লজ্জ ডাকাতি বাংলাদেশের মানুষ আর কখনও দেখেনি।
ইটনা উপজেলার উয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীমের এজেন্ট মো. জামাল মিয়া অভিযোগ করেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ক্ষমতাসীনদের চাপের মুখে এই কেন্দ্রের ফুটবল প্রতীকের ৮জন এজেন্টই বের হয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর কেন্দ্রে ভোটার না থাকলেও নৌকা প্রতীকের পক্ষে ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স বোঝাই করা হয়। এ ব্যাপারে তারা প্রিজাইডিং অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
মিঠামইন উপজেলার দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফুটবল প্রতীকের নির্বাচনী এজেন্ট আবদুল আউয়াল অভিযোগ করেন, ভোট চলাকালে তিনি ও একই কেন্দ্রে ফুটবল প্রতীকের এজেন্ট রমজান আলী সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কাছে জিম্মি ছিলেন। ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল বিবরণীতে স্বাক্ষর দিয়েও তারা নিষ্কৃতি পাননি। একজন পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় বাড়ি থেকে কোন রকমে পালিয়ে এসেছেন। ক্ষমতাসীনদের হুমকির রমজান আলীও গতকাল গোপনে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এখন দু’জনই বাড়িছাড়া অবস্থায় রয়েছেন। চমকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফুটবল প্রতীকের এজেন্ট রেজাউল করিম জানান, ভোট শুরু হওয়ার পরই ফুটবল প্রতীকের চার এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে তাকে ধরে নিয়ে ফলাফল বিবরণীতে স্বাক্ষর করান। নির্বাচক পর্যবেক্ষকদের মতে, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দ্রুতগামী যানবাহনের অভাবে মিডিয়া কর্মীদের তিন উপজেলা সদরের ভোট কেন্দ্রগুলোর বাইরে অন্য কেন্দ্রগুলো কাভার করা ছিল খুবই দুরূহ। এ ছাড়া সংগঠনবিহীন বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টরা সরকারি দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের ভয়ভীতি আর প্রভাবের মুখে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ছিলেন অসহায়। তারা সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো তাদের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। এ কারণে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা চললেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা নীরবে সহ্য করেছেন। যেখানে পারেননি, সেখানে বের হয়ে গেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে তিন থানার তিন ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এরপরও বিদ্রোহী প্রার্থী প্রশাসনের নানা পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে গণমাধ্যমের নিকট বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেন। এসব নানা প্রতিকূলতা দু’প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে।
রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ৯৯ হাজার ৯৩৩ ভোট পেয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম পেয়েছেন ৫৯ হাজার ২২৪ ভোট। উপজেলাওয়ারি হিসাবে, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ইটনায় ৩৭ হাজার ৫৪, নিজ উপজেলা মিঠামইনে ৩৪ হাজার ৫২৩ ও অষ্টগ্রামে ২৮ হাজার ৩৫৬ ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম ইটনায় ২৩ হাজার ৫৭৩, মিঠামইনে ৮ হাজার ৮৯৮ ও নিজ উপজেলা অষ্টগ্রামে ২৬ হাজার ৭৫৩ ভোট পান। রিটার্নিং অফিসার মো. জাহিদ হোসেন গতকাল সকাল ১১টার দিকে ফলাফল ঘোষণার সময় জানান, আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’প্রার্থীর কারও পক্ষ থেকেই নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পাননি।

No comments

Powered by Blogger.