বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ by জেসমিন পাপড়ি

বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করতে একটি অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে ভারত ও চীন এ বিষয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করতে একমত হলেও বাংলাদেশ এ জোটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়, সঙ্গে মিয়ানমারকেও।

এ করিডোর বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এ সকল দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াবে- এ আশায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে।

জানা গেছে, বিসিআইএম (বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার) আঞ্চলিক ফোরাম নামে এ উপ-আঞ্চলিক জোটের প্রথম দৃশ্যমান উদ্যোগ ছিল বিসিআইএম মোটর শোভাযাত্রা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার সল্টলেক হেলিপ্যাড থেকে মোটর শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা থেকে যশোর, ঢাকা, শিলচর, ইম্ফল, কা লে, মান্দালাইয়া, রুইলি, তেংচঙ্গ, আর্থাই লেক, ডালি হয়ে ১২ দিনে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চীনের কুনমিং গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়।

জুনের শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের চীন সফর এ বিষয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানা গেছে। তার সফরকালে এ করিডোর গঠনে চীনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।

এর আগে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক মিয়ানমার সফর শেষে ফিরে বিসিআইএমে সহযোগিতার বিষয়ে মিয়ানমার খুবই আন্তরিক বলে জানান।

বিশেষ করে এ করিডোরে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ রেলপথ ও সড়ক ‍নির্মাণ প্রকল্প শুধু আঞ্চলিক যোগাযোগই তৈরি করবে না, বাণিজ্য ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তেরও উন্মোচন করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারত অনেক দিন ধরেই দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছিল। বিসিআইএম করিডোর চালু হলে সহজেই এ করিডোর দিয়ে বাণিজ্যিক পণ্য নিতে ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে। ফলে ভারতও এমন কানেকটিভিটি দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিটে কাজে লাগাতে পারবে। আর এসব সুবিধার কারণে বাংলাদেশের এ করিডোরে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কানেকটিভিটির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে করিডোর ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য কমিয়ে তাদের ওপর আস্থা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে চীন। আর এ অঞ্চলে ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সুযোগ প্রতিবেশি দেশগুলো যেমন নিতে চাইবে, তেমনিভাবে বাংলাদেশকেও নিতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিসিআইএম আঞ্চলিক ফোরাম জোরদারে চীন ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহযোগিতাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। যে কারণে জুনের প্রথম দিকে বাংলাদেশকে ‘থিম কান্ট্রি’ করে চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে চীন-দক্ষিণ এশিয়া এক্সপো আয়োজন করা হয়।

এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয় বলে অতীতে ছোট পর্যায়ের বাণিজ্যমেলাকে এক্সপোতে উন্নীত করেছে চীন।

শুধু তাই নয়, সচিবের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য আরও বাণিজ্য ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা আরো সহজলভ্য করবে বলেও জানানো হয়।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীন বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে।

তবে এসব প্রতিশ্রুতিতে এখনই আনন্দে ভেসে যাওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের কোনো প্রতিনিধি যখন চীন বা ভারতক সফর করেন তখন এ সুবিধাগুলো দেওয়ার কথা বা অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির কথা সব সময় শোনা যায়। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়নে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, অর্থনৈতিক করিডোর সব কিছুই এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়ে। মুখে বলা হয়েছে। লিখিত কিছু আসেনি।

তিনি বলেন, এসব কোনো দিনই হবে না, এমনটি নয়। তবে এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা চাই অতি দ্রুত এসব আলোচনা কার্যকর করা হোক।
  
এ অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্ব বিষয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ ভৌগলিক কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব দেশ চায় নিজের সুবিধা আদায় করতে। ভারত, চীনও চাইবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিভিন্ন সুযোগ নিতে। কিন্তু সেটা নির্ভর করবে আমাদের নীতি নির্ধারকদের দিতে পারা ও নিতে পারার ক্ষমতার ওপরে।

এর আগে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ক্যাকিয়াং গত ২০ মে ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, উভয়পক্ষ বিসিআইএম আঞ্চলিক ফোরামের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও জনগণের পর্যায়ে যোগাযোগ নিবিড় করতে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.