একটি ভুল ও একজন সন্ধ্যা রানী by কাজী আনিছ

নাম সন্ধ্যা রানী। দুই সন্তান আর স্বামী নিয়ে সংসার। একটু সচ্ছলতার আশায় চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ঝাড়ুদারের চাকরি। কিন্তু সেই স্বপ্নটি পূরণ হলো না।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ঝাড়ুদার পদে আবেদন করলেও সন্ধ্যা রানী পান অন্য পদের প্রবেশপত্র।
নির্দিষ্ট দিনে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে এসে জানলেন, ঝাড়ুদার পদের পরীক্ষা আগেই হয়ে গেছে।
সন্ধ্যার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের নাটক মরলেনে। তাঁর স্বামী সুভাষ একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। স্বামীর আয়ে সংসার চলত না, তাই চাকরির সন্ধান শুরু করেন সন্ধ্যা। গত ২১ মার্চ আসে সেই সুযোগ। একটি পত্রিকায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ‘ঝাড়ুদার’ পদে আবেদন করেন তিনি। একই পদে আবেদন করেন তাঁর স্বামীও।
সন্ধ্যা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীর প্রবেশপত্র না এলেও গত ১৭ জুন ডাকযোগে তাঁর কাছে প্রবেশপত্র যায়। কিন্তু প্রবেশপত্রে পদের নামের জায়গায় লেখা আছে ‘পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা’। ২৮ জুন মোহাম্মদপুরে একটি স্কুলে বেলা তিনটায় ছিল পরীক্ষা।
সন্ধ্যা বলেন, ‘পরীক্ষার হলে একজন আমারে প্রশ্নপত্র দিয়া কইল, উত্তর লেখেন। আমি কইলাম, “আমি লেখাপড়া জানি না। শুধু নাম দস্তখত করতে পারি। কী লিখমু? আমি তো ঝাড়ুদার পদের পরীক্ষা দিতে আইছি।” ম্যাডাম কইল, ঝাড়ুদার পদের পরীক্ষা ২২ জুন শেষ হইয়া গেছে।’
সন্ধ্যা ও তাঁর স্বামী ২৮ জুন বিকেলে ঢাকায় প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে তাঁদের নাজেহাল হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে সন্ধ্যা আবেদন করেছিলেন, সেখানে ঝাড়ুদার পদে ময়মনসিংহ জেলা থেকে কোনো আবেদন চাওয়া হয়নি। আবার ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নামের কোনো পদও নেই।
এ ব্যাপারে জানতে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে গিয়ে জানা যায়, ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার জন্য পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে পড়া আবেদনপত্রগুলো আলাদা বস্তায় ভরে অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ একটি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তারাই প্রবেশপত্র তৈরি করে।
এক কর্মকর্তা বললেন, ‘সন্ধ্যা রানীও ভুল করেছেন, আমরাও করলাম। হয়তো পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদের বস্তায় তাঁর আবেদনটি ঢুকে গিয়েছিল। অল্প সময় বলে যাচাই-বাছাইও করা হয়নি। না হলে সন্ধ্যা রানীর আবেদনটি বাদ পড়ে যেত।’
অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাবিহা আমাতুর রসুল বলেন, এখন এ ভুল শোধরানোরও কোনো উপায় নেই।
এ তথ্য জানানোর পর মুঠোফোনে সন্ধ্যা বললেন, ‘ভাই, আমি তো অশিক্ষিত, ভুল করছি। শিক্ষিতরাও ভুল করল?’ সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘স্বামীর সাড়ে সাত হাজার টাকায় চলে সংসার। ঢাকায় যাওয়া-আসায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হইয়া গেছে। ভুলের মাশুলডা এ গরিবরেই দিতে হইল।’

No comments

Powered by Blogger.