প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য তিন মাসের মধ্যে শ্বেতপত্র-স্থায়ী বেতন কমিশন হচ্ছে by আশরাফুল হক রাজীব

স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশনের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী অর্থবছরেই এ কমিশন গঠন করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন-ভাতার ঘোষণা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায়।
ব্যাংকের মতো আরো কিছু ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হবে। এসব প্রস্তাব স্থায়ী বেতন কমিশন থেকে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থায়ী বেতন কমিশন ঘোষণা করায় কর্মচারীরা সরকারকে অভিনন্দন জানালেও তাঁরা পুরোপুরি খুশি হতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেছেন। সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূইয়া মিলন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্থায়ী বেতন কমিশন ঘোষণা করায় সরকারকে অভিনন্দন। আমরা এখনো ৩০ ভাগ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। কারণ বেতন কমিশন গঠন ও সুপারিশ করতে দুই বছরের বেশি সময় প্রয়োজন। এই অন্তর্বর্তী সময়ে আমরা কিভাবে চলব? আশা করি, সরকার বাজেট পাস করার সময় আমাদের দাবি মেনে নেবে।' বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ জানিয়েছে, বাজেটে কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা না থাকায় তারা আগামী ১২ জুন সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে সপ্তম বেতন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের ২০১০ সালে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার ২০০৯ সাল থেকেই সরকারি কর্মচারীদের বর্ধিত হারে বেতন-ভাতা দিচ্ছে। সেই কমিশন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য একটি স্থায়ী বেতন কমিশনের সুপারিশ করে। শুধু ২০০৮ সালের কমিশনই নয়, এ পর্যন্ত গঠিত সাতটি বেতন কমিশনের ছয়টিই স্থায়ী বেতন কমিশনের সুপারিশ করেছে। কিন্তু এসব সুপারিশ আমলে নেয়নি সরকার। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। বরং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে তাঁদের জীবনধারণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। আবার সময়ের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় বেতন বৃদ্ধি কম হওয়ায় তাঁদের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে।
২০০৮ সালের আগে ২০০৪ সালে ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালে পঞ্চম, ১৯৮৯ সালে চতুর্থ, ১৯৮৪ সালে তৃতীয়, ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় ও ১৯৭২ সালে প্রথম জাতীয় বেতন কমিশন গঠিত হয়।
গতকালের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জনপ্রশাসনে সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়ন, পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন, পদায়ন ও বদলি নীতিমালা প্রণয়ন, মাঠ প্রশাসনের কাঠামো সংস্কার, মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছায়ন, নতুন অডিট আইন প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সরকার ভবিষ্যতে ক্যাডার ব্যবস্থায় সংস্কার আনবে। কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্রকে সংকুচিত করে স্থানীয় সরকারের জন্য জীবনমুখী আমলাতন্ত্র আনা হবে। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ও সেবা সরবরাহকে স্থানীয় সরকারে ন্যস্ত করতে হবে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমলাতন্ত্র কার্যকর করতে তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ জোরদার করা হবে। বিষয়টিকে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের চিহ্নিত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এটিই হবে আগামী সরকারের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের চিন্তাভাবনা আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি শ্বেতপত্রে প্রকাশ করব।'

No comments

Powered by Blogger.