সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি-এই বাজেট উচ্চাভিলাষী মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবে

প্রস্তাবিত ২০১৩-১৪ সালের বাজেটকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বিশাল অঙ্কের বাজেট দেওয়া হয়েছে।
এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না সরকার। এ বাজেটের কারণে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে এসব কথা বলেন এম কে আনোয়ার। তিনি বলেন, এ বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব। এতে জাতীয় অর্থনীতির জন্য, জাতির জন্য কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এ বিশাল বাজেটের অর্থায়ন কিভাবে জোগান দেওয়া হবে তার কথাও উল্লেখ নেই। এ সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বেশ কয়েকজন সদস্য।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাপ থাকলেও কার্যত দলীয় নেতা-কর্মীদের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সহজে সাদা করার সুযোগ দিতেই এমনটা করা হয়েছে। এতে করে সৎ করদাতাদের শাস্তি দেওয়া হবে। সামগ্রিক বাজেট নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'ইট ইজ এ বিগ বিউটিফুল বেলুন।'
এম কে আনোয়ার বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে প্রবৃদ্ধির হার দেখিয়েছেন, তা বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি। এ বিশাল বাজেটের কারণে নতুন করে অনেক মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানো হবে। অভ্যন্তরীণ খাতে ঋণ বাড়ানোর কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে। অবশ্য ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী মেধার পরিচয় দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এম কে আনোয়ার বলেন, বাজেটের ঘাটতি মেটানোর জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কাটছাঁট, ব্যাংক ঋণ বাড়ানো অথবা জনগণের ওপর নতুন করে করারোপ করতে হবে। তিনি বলেন, এ বাজেটে সামগ্রিকভাবে ৮ শতাংশ ভর্তুকি কমানো হয়েছে। কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ১৮ শতাংশ। এ খাতে ভর্তুকি কমানো হয়েছে ২৫ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর জন্য বাজেটে ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে দাবি করে এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার পদ্মা সেতুকে রাজনৈতিক জেহাদ হিসেবে নিয়েছে। আরেকটু অপেক্ষা করলে হয়তো বিশ্বব্যাংক আবার সহযোগিতা করত।
না যাওয়ার ব্যাখ্যা: সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বুধবার সংসদে সরকারের একজন মন্ত্রী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন এবং বিএনপির সংসদ সদস্য আসিফা আশরাফি পাপিয়াকে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপনকালে বিরোধী দল সংসদে যায়নি।
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ বলেছেন, এটি রাজনৈতিক বাজেট। এর ফলে দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা ও প্রার্থনা সভায় তিনি বক্তৃতা করছিলেন। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে মন্ত্রী ও দুর্নীতিবাজদের পকেট ভারীর জন্য মূলত এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট গৌতম দেওয়ান, বাবু দীপেন দেওয়ান, অধ্যাপক ড. মো. আকতার হোসেন খান প্রমুখ।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে গণবিরোধী উল্লেখ করে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজধানীর বিজয়নগর ও পল্টন এলাকায়।

No comments

Powered by Blogger.