এমপিওভুক্তি নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ-শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের ওপর 'সর্বদলীয় আক্রমণ'

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়েছে সংসদ। সরকার ও বিরোধী দল- উভয়ে মিলে গতকাল সংসদ উত্তপ্ত করে। বারবার তাগাদা সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তারা একই সুরে শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করে বক্তব্য উত্থাপন করে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাদের বক্তব্য স্বাভাবিকভাবে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বলে বলেন, 'সরকার ও বিরোধী দল- দুই পক্ষ থেকে আমাকে এমপিওভুক্তি নিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। এতে আমি কষ্ট পাইনি; বরং আনন্দিত।'
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সদস্য তাঁদের কাছ থেকে তিনটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য তালিকা নিয়েও তা না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জাতীয় পার্টির এ কে এম মাইদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মোল্লা জালাল উদ্দীন, বিএনপির আবুল খায়ের ভুঁইয়া ও জেড আই এম মোস্তফা আলীসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রীকে এমপিওভুক্তির বিষয়ে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। দুই পক্ষের তোপের মুখে মন্ত্রী ফের আশ্বাস দেন, বাজেট পেলে এমপিওভুক্তি করা হবে। এর আগেও মন্ত্রী এমপিদের এ আশ্বাস দিয়েছেন।
এ কে এম মাইদুল ইসলাম বলেন, 'আপনি প্রত্যেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে তিনটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম নিয়েছেন। কিন্তু কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা হয়নি। এটা আমাদের বিব্রত করছে। এলাকার লোকজনকে কৈফিয়ত দিতে পারছি না।'
মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, 'অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার মান ভালো হওয়া সত্ত্বেও সেগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাই। এখন বাজেট না থাকলেও আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখার সুযোগ রয়েছে।'
সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে আবুল খায়ের ভুঁইয়া বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমার নির্বাচনী এলাকার একটি কলেজকে এমপিওভুক্তির জন্য চেষ্টা করছি। তবে বারবার কাজটি পিছিয়ে যাচ্ছে।'
এমপিদের এসব কথার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আজ সরকার এবং বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা আমাকে একসঙ্গে আক্রমণ করছেন; এ জন্য আমার খুব ভালো লাগছে। আমাদের সামর্থ্য কম হওয়ায় আমরা একসঙ্গে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে পারছি না। আমি সবার কাছ থেকে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম নিয়েছি প্রচার করার জন্য নয়; এমপিওভুক্তি করার জন্য। অর্থমন্ত্রীসহ আমরা এ বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটা দ্রুতই সম্ভব হবে বলে আশা করছি।'
গতকাল দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেন একাধিক সদস্য। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং ওই ঘটনায় কাউকে আটক না করা নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার সরকারের সমালোচনা করে আসামিরা আদৌ গ্রেপ্তার হবে কি না জানতে চান। মন্ত্রী আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আশ্বাস দেন।
উদয়ন স্কুলের এক ছাত্রীর পোশাকের হাতা কেটে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া। এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা কী জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। যে শিক্ষিকা এ কাজ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি ওই স্কুলে আর শিক্ষকতা করতে পারবেন না।
কওমি মাদ্রাসাকে সরকারি নীতিমালায় আনা হবে : আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ লক্ষ্যে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন-২০১২ গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন শিক্ষানীতি ২০১২-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে।
রাজধানীতে পাঁচ হাজার অনুমোদনহীন বাড়ি : বিএনপির মোছাম্মৎ ফরিদা আখতারের প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান জানান, রাজধানীতে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বা অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ করা বাড়ির তালিকা রাজউক প্রণয়ন করেছে। এ রকম প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ির তালিকা তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে অপসারণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অন্যান্য বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের মোশতাক আহমেদ রুহীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর হাইকোর্টের নির্দেশে রাজউক বুয়েটের প্রতিনিধি ও নিজের প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.