মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।
—বি. স. মেহতাব খানম সমস্যা আমার বয়স ১৮। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার কোনো বন্ধু নেই। কারণ, আমি কারও সঙ্গে মিশতে বা গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। সাবলীলভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি না। বুঝতে পারি না, আমার কী বলা উচিত। আমার আত্মবিশ্বাস খুবই কম। অনেক পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিতে গেলেও ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, অস্থির হয়ে যাই এবং মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিতে পারি না। নিজেকে খুব অসুন্দর মনে হয়। বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না। আমি ছোট থেকেই পারিবারিক অশান্তি ও মানসিক চাপের মধ্যে বড় হয়েছি। এখন মা-বাবা অনেক অসুস্থ এবং পরিবার আর্থিক সংকটে। আমি সব সময় দুশ্চিন্তা করি। ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে পরিবারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা হয়। প্রায়ই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোথাও রাখার পর ভুলে যাই। বদমেজাজি হয়ে গেছি এবং বাসায় থাকলে অনেক বেশি কথা বলি। বিভিন্ন কারণে নিজেকে খুব খারাপ মনে হয়।
মেরিনা (ছদ্মনাম)

পরামর্শ
গুছিয়ে লেখা চিঠির জন্য ধন্যবাদ। তুমি যেহেতু পারিবারিক অশান্তি আর মানসিক চাপের মধ্যে বড় হয়েছ, সে কারণেই সম্ভবত তোমার মধ্যে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তার সূত্রপাত ঘটেছে আগে থেকেই। সাধারণত অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিবেশের প্রভাব শৈশব থেকে আমাদের মনে পড়তে শুরু হয়। তবে বয়ঃসন্ধিতে গিয়ে নেতিবাচক আচরণের মধ্য দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু এই কারণে নিজেকে খারাপ মনে না করাই উচিত হবে। নিজেকে কখনো ছোট কোরো না। কারণ, এত প্রতিকূল পরিবেশে বড় হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় অস্থিরতা আর প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা বোধ করা সত্ত্বেও তুমি দুটি বড় পরীক্ষায় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছ। তোমার ব্যক্তিত্বে আসলে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং ভেতরের সেই ভদ্র ও বিনয়ী মানুষটি আগের মতোই রয়েছে, এটি বিশ্বাস করতে পারো। মনে হচ্ছে, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তোমাকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে। দেরি না করে তুমি প্রথমে বেশ কিছুদিন সাইকোথেরাপির সাহায্য নাও। সেবা গ্রহণ করলে কীভাবে নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে দুশ্চিন্তা আর বিষণ্নতা কমানো সম্ভব, সেই কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারলে তুমি নিশ্চয়ই সুস্থ জীবনযাপনে সক্ষম হবে।

সমস্যা
আমার বয়স ২০ বছর। আমি বিবাহিত। আমরা তিন ভাইবোন। আমার ছোট বোনের বয়স ১৫ বছর। কিছুদিন আগে বাবার বাড়িতে গেলে মা আমার কাছে ছোট ভাইবোনদের রেখে কয়েক দিনের জন্য নানিবাড়িতে বেড়াতে যান। এই কয়েক দিনে আমি ধরতে পারি, আমার বাবা মুঠোফোনে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম করেন। প্রমাণও পাই। বিষয়টি আমার জীবনের সব থেকে অবিশ্বাস্য ঘটনা। আমি বিষয়টি আমার ছোট বোন ছাড়া কাউকে বলতে পারছি না। আমার বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও সমাজে সম্মানিত। বাবাকে অসম্ভব বিশ্বাস করেন মা। এখন যদি এই বিষয়টি তিনি জানতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবেন। এদিকে আমার ছোট বোনটিও এই বিষয় মেনে নিতে পারছে না। সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে
পরামর্শ
তোমাকে এ ঘটনাটি কতটা বিচলিত, বিপর্যস্ত ও অসহায় বোধ করিয়েছে, তা বুঝতে পারছি। বিশেষ করে বাবার মতো প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির এই পদস্খলন সত্যিই সন্তানের জন্য সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন। তুমি কি বুঝতে পেরেছ, বাবার এই সম্পর্কটি কতটা সিরিয়াস? তিনি শুধু সময় কাটানোর জন্য এটি করেছেন? দুজনের সম্পর্কে সত্যিকারের গভীরতা, আস্থা ও সততা আছে কি না, তা কি বুঝতে পেরেছ? আমি জানি না, বাবার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন। যদি তাঁর সঙ্গে খোলামেলা ও মোটামুটি বন্ধুর মতো সম্পর্ক থাকে, তাহলে তুমি নিজেকে শান্ত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁকে জানাতে পারো—এটা নিয়ে তুমি কতটা আহত হয়েছ। এটাও তাঁকে বলতে পারো, তোমার বয়ঃসন্ধিতে থাকা ছোট বোন ও তাঁর ২৫ বছরের জীবনসঙ্গী মাকে এটা কতটা কষ্ট দিতে পারে। হয়তো বা তিনি তোমাকে কথা দিতে পারেন, তিনি তাঁর এই যোগাযোগ বন্ধ করে দেবেন, যদি মাকে এটি জানানো না হয়। যদি তিনি সেটা সত্যিই বন্ধ করে দেন, তাহলে খুব মঙ্গল হয়। ছোট বোনকেও বোঝাও যে তাকে এই মুহূর্তে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। বাবার কৃতকর্মের জন্য সে মোটেও দায়ী নয়। যদি তার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তুমি তাকে কোনো ক্লিনিক্যাল বা কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের কাছে সাইকোথেরাপির জন্য নিয়ে যেতে পারো। যদি বাবা এটি বন্ধ না করেন, তাহলে তোমাকে একসময় মাকে জানাতে হবে। তিনি এটি জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবেন ঠিকই, কিন্তু পাগল হয়ে যাবেন না। তোমরা তিনজনই এ আঘাতটি সামলে নিয়ে জীবনে চলতে পারবে, এ বিশ্বাস ধরে রেখো।

No comments

Powered by Blogger.