রুয়েট অচলঃ ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পেরে ফিরে গেলেন ভিসি

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারলেন না। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রায় এক ঘণ্টা সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে থেকে নিরুপায় হয়ে তিনি চলে যেতে বাধ্য হন।
এদিকে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে আন্দোলনের মুখে অচল হয়ে পড়েছে রুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম। সূত্রে জানা যায়, গতকাল পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সেখানে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিল আন্দোলনকারীরা।
সকাল ১১টায় ভিসি প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত তার বাসভবনে প্রবেশের উদ্দেশ্যে প্রধান ফটকে আসেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরা প্রো-ভিসির কয়েকজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে ভিসির রেজাল্ট জালিয়াতির মিটিংয়ের রেকর্ড মাইকে চাউর করতে থাকেন। প্রায় ১ ঘণ্টা সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে নিরুপায় হয়ে তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তার বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়ে বাসার টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারীরা।
গত ২৫শে নভেম্বর ক্যাম্পাসের সঙ্কট নিরসনে উপর মহলের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় যান ভিসি। পরের দিন থেকে ভিসির অপসারণের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রুয়েট ক্যাম্পাস। গত বুধবার ঢাকা থেকে ফিরে রাজশাহী শহরে তার এক আত্মীয়ের বাসায় স্ত্রীসহ অবস্থান করেন। সেখান থেকে গতকাল ভিসি তার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে তার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে সেখান থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এ সময় ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শতাধিক পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
শিফাত আহমেদ আদনান নামের এক শিক্ষার্থীকে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ (২.৯৭) থেকে  প্রথম বিভাগ (৩.০০) পাইয়ে দেয়ার অভিযোগসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ১৫ই নভেম্বর থেকে রুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সিফাত রাজশাহী  মহানগরীর সাবেক পুলিশ কমিশনার ওবায়দুল্লাহর পুত্র হওয়ায় ভিসি এই রেজাল্ট জালিয়াতির মত একটি অনৈতিক কাজ করার সাহস পান বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। এদিকে রেজাল্ট জালিয়াতির অভিযোগে ভিসির অপসারণের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে আন্দোলনের মুখে অচল হয়ে পড়েছে রুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চরম সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন রুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভিসির রেজাল্ট জালিয়াতির মিটিংয়ের রেকর্ড শোনার পর আমাদের আর বুঝার বাকি নেই যে, তিনি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। টানা দু’সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে ভিসির অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলে আমরা ভয়াবহ সেশনজটের সম্মুখীন হবো। তাই অতিদ্রুত এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
রুয়েট বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি রেজাল্ট জালিয়াতির মত একটি অনৈতিক কাজ করে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাই তিনি তার পদ থেকে সরে গিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আবারও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি একাডেমিক মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজাল্টের বিষয়টি সুরাহা করেছি। সেখানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমি যদি অনিয়ম করতাম তাহলে তাদের পক্ষ থেকে অন্ততপক্ষে একজন তখন বলতেন যে, আপনি অনিয়ম করেছেন। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় তিনি আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য তাদের আহ্বান জানান। তবে আন্দোলনকারীরা তাতে সর্মথন না দিয়ে ভিসিকে ক্যাম্পাসে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়।
এএইচএম খায়েরুজ্জামান লিটন বলেন, গত কয়েক দিন থেকে রুয়েটে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সাধারণ  শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতির কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা হয়। এ সময় তাদের জানানো হয়েছে, বর্তমানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকার তাদের অপসারণ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে ঐক্যপরিষদের সদস্য সচিব ও রুয়েট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ জানান, ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রেজাল্ট জালিয়াতি, জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টতা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে গত ২৬শে নভেম্বর থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে প্রগতিশীল ঐক্যপরিষদের ব্যানারে আওয়মী লীগগের একাংশের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রলীগ।

No comments

Powered by Blogger.