বিজিএমইএর সঙ্গে সভা-বিদেশি ক্রেতাদের সতর্কবার্তা

বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ওপর বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা ধরে রাখতে দৃষ্টান্তমূলক কিছু করার পরামর্শ দিলেন তাদের ঢাকাস্থ প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় আগুনে পুড়ে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক কিছু করা না গেলে ক্রেতারা আস্থা হারাবে।
অতীতে অনেক উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা খুব বেশি কাজে আসেনি।
ক্রেতা প্রতিনিধিরা কারখানার অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পোশাক খাতের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, টাস্কফোর্সে ক্রেতা ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি রাখা, মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো, বৈদ্যুতিক সংযোগে উন্নত উপকরণের ব্যবহার ইত্যাদি পরামর্শ দেন। অন্যদিকে বিজিএমইএ নেতারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্রেতাদের সহায়তা চান।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিজিএমইএ ভবনে ক্রেতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজিএমইএর নেতারা। বৈঠকে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও ওয়ালমার্টের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। প্রতিষ্ঠানটি আগেই বিজিএমইএকে জানিয়েছে, তাদের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঢাকায় নেই বলে তাঁদের কেউ বৈঠকে থাকবে পারবেন না। বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান এ তথ্য জানান।
বৈঠকে এইচ অ্যান্ড এম, গ্যাপ, কেয়ারফোর, জেসি পেনি, লিভাইস, নিউ লুক, টোসুকা, লি অ্যান্ড ফাং বাংলাদেশ, পিভিএইচ, টিএসএস, নিকি, রেডক্যাটস এশিয়া, ট্রিটন, জিআইজেড এবং আইএফসিসহ প্রায় ৩৫টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
লিভাইসের কান্ট্রি সোর্সিং ম্যানেজার এম জুবায়ের আসলাম বলেন, 'বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের এই মুহূর্তে দৃষ্টান্তমূলক কিছু করে দেখাতে হবে। নতুবা বিশ্ব ক্রেতাদের আস্থা ফেরানো যাবে না। এ জন্য উদ্যোক্তাদের সময় নেওয়া ঠিক হবে না।'
গত বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিরসনে কাজ করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেয়। গতকালের সভায় বায়ারস ফোরামের নেতা পিভিএইচ ফারইস্ট লিমিটেডের দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক জিয়া আহাদ ওই টাস্কফোর্স কিভাবে কাজ করবে, সদস্য কারা হবেন- সে বিষয়ে জানতে চান। তিনি মধ্যম সারির কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এমের প্রতিনিধি পায়াল জাইন বলেন, 'এর আগেও টাস্কফোর্সের কথা শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে কাজ কিছু দেখিনি। আবার অনেক কাজ শুরু হলেও শেষ হয় না। এ বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।'
পায়াল জাইন আরো বলেন, 'কারখানাগুলোর বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বিদ্যুৎ সংযোগের সমস্যার কারণে। আমরা চারটি নামকরা কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা করে দেখেছি। বিদ্যুৎ সংযোগে তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।'
লি অ্যান্ড ফাং বাংলাদেশের প্রতিনিধি রজার হুবার্ট বলেন, 'বাংলাদেশে অনেক উন্নত কারখানা আছে। আবার খারাপ কারখানাও আছে। এ দেশের মালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে এই খারাপ কারখানাগুলো থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকার ৭০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। আমরা জেনেছি তার এক-তৃতীয়াংশ কারখানা খুবই খারাপ।'
বিজিএমইএর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বৈঠকের শুরুতে তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'বিজিএমইএ আগেও শ্রমিকদের পাশে ছিল, এখনো আছে। আমরা নিহত ও আহত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দিচ্ছি। নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছেন একেকজন উদ্যোক্তা। এ ছাড়া আহতদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদেরও প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেওয়া হবে।'
সফিউল ইসলাম বলেন, 'এ ঘটনা পুরো শিল্পকে নাড়া দিয়েছে। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পুরো শিল্পকে আরো সুসংহত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য বিজিএমইএর সাধারণ পরিষদ একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই টাস্কফোর্স বিজিএমইএর সব কারখানা পরিদর্শন করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে। যেসব কারখানা পুরেপুরি কমপ্লায়েন্ট নয়, তাদের সময় দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমপ্লায়েন্ট না হতে পারলে সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
বিজিএমইএর সভাপতি এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তাদের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.