জলবায়ু উদ্বাস্তু-নতুন প্লাবনের প্রস্তুতি নিন

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাস্তুহারা মানুষ নিয়ে বাংলাদেশি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের গবেষণা প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশ হলো, যখন কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বিষয়ে বৈশ্বিক সম্মেলন।
মূলত নীতিনির্ধারণী ওই আয়োজনে যদিও কোনো দেশের পক্ষে এককভাবে দরকষাকষির সুযোগ নেই, তবু এই গবেষণার ফল প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের জলবায়ু বিপন্নতার চিত্র স্পষ্টতর এবং অর্থায়নের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ও নদীভাঙনে ২০২০ সাল নাগাদ কমবেশি সোয়া দুই কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা কেউ আমলে না নিয়ে পারবে না। আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অন্যতম প্রধান উপায় এডাপ্টেশন বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে নীতি ও প্রস্তুতিগত দিক থেকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। তা বিশ্বে প্রশংসিতও। কিন্তু এর বাইরেও বিপুল জনগোষ্ঠীর স্থানান্তরের প্রশ্ন যে রয়েছে, আলোচ্য গবেষণা তার প্রমাণ। কেবল বৈশ্বিক পক্ষগুলো নয়, দেশীয় নীতিনির্ধারকদেরও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে প্রাকৃতিক কারণে বাড়তি দুই-আড়াই কোটি উদ্বাস্তুর বাস্তু ও জীবিকা সংস্থান সহজ নয়। এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক লড়াই ও দরকষাকষির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বসতি ত্যাগে বাধ্য জনগোষ্ঠী আন্তর্জাতিকভাবে এখনও উদ্বাস্তু হিসেবে স্বীকৃত নয়। একই সঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি পর্যায়েও জলবায়ু উদ্বাস্তু নিয়ে গবেষণা হতে হবে। আমরা এ ধরনের গবেষণা যত বেশি করতে পারব এবং তার ফল বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারব, জলবায়ু উদ্বাস্তুর স্বীকৃতি তত সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.