বিজয়ের মাস-উৎসব-আনন্দে মেতে উঠুক দেশ

আজ থেকে শুরু বিজয়ের মাস_ ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ হবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ৪১ বছর। বিজয়ের গোটা মাসজুড়ে অগণিত সংগঠন আয়োজন করবে নানা অনুষ্ঠানের। স্মরণ করা হবে একাত্তরের বীর যোদ্ধাদের অনন্য কীর্তি। নতুন প্রজন্ম এসব অনুষ্ঠান থেকে পাবে প্রেরণা।
এ সময়ের আলোচনা ও অন্যান্য আয়োজনে বরাবরই থাকে ভাবগাম্ভীর্য এবং আবেগ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে কয়েকজনের বিচার চলছে। এর প্রতিও রয়েছে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও অপরিসীম মনোযোগ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করেছে, তাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না। এটা বরাবরই জাতীয় দাবি ছিল। বিশেষ করে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের দিক থেকে এ ইস্যুটি সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করে। বিজয়ের এই মাসে একাত্তরের অপরাধকর্মের এ দেশীয় হোতাদের বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দাবি আরও জোরের সঙ্গে উত্থাপিত হবে, সেটা ধরেই নেওয়া যায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছিল এবং তদনুযায়ী বিচার কাজও শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও দেশবাসীর এ প্রত্যাশা পূরণে সংকল্পবদ্ধ থাকবে, এটাই প্রত্যাশা। তাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন ও নির্বাচনী জোট রয়েছে। এখন সরকারসহ অনেকেরই অভিযোগ যে, জামায়াতে ইসলামী চাইছে এ বিচার কাজ ভণ্ডুল করে দিতে এবং সেজন্য রাজপথে যেসব কর্মসূচি পালন করছে, তার লক্ষ্য নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। বিএনপির তরফ থেকেও তাদের মিত্র দলটিকে অসংযত আচরণের বিষয়ে এক ধরনের সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়েছে। বিজয়ের এই মাসে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সহযোগীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করুক সেটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাদের রাজনৈতিক অধিকারের সীমা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠছে। গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্য ব্যবহার করবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের মিত্র দল বিএনপিকেও এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন রয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ জোটভুক্ত অন্যান্য দলের। ৯ ডিসেম্বর ডাক দেওয়া হয়েছে অবরোধের। অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকেনি। এবারে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটা কাম্য হতে পারে না। আমরা আশা করব যে, রাজনৈতিক কর্মসূচি সর্বতোভাবে শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা নেওয়া হবে। এ কর্মসূচি যেন বিজয়ের মাসের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না করে সেটা নিশ্চিত করা চাই। বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি যেন হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আন্দোলনকে ব্যবহার করতে না পারে। দেশবাসীকেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিজয়ের এই মাসে আনন্দ-উৎসবে সবাই মেতে উঠুক, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সংকল্প দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করুক_ এটাই একান্তভাবে কাম্য। একাত্তরই তো এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।

No comments

Powered by Blogger.