আব্বাসের সামনে কঠিন সময়

আরব বসন্তের কারণে বদলে যাওয়া পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এখন যেন দাবা খেলা চলছে। ঘুঁটির চালে একটু ভুল হলেই গদি টলে ওঠার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে রাষ্ট্রনেতাদের জন্য।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও এর ব্যতিক্রম নন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘের কাছ থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের জন্য বড় ধরনের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়ে আসার পরও অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।
মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ (পিএনএ) বর্তমানে পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইসলামপন্থী দল হামাস আছে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণে। ফিলিস্তিনের ২০০৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে ফাতাহ আন্দোলনকে (আব্বাসের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল) পরাজিত করে হামাস। ফাতাহ ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানালে ২০০৭ সাল থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় হামাস। তবে দীর্ঘদিনের বিরোধ সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারিতে হামাস ও ফাতাহ নেতারা সমঝোতায় পেঁৗছান। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘে সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবি তোলার ঘোষণা দিলে হামাস নেতারা তাতে সমর্থন দেন।
জাতিসংঘের 'নন মেম্বার অবজারভার স্টেট'-এর মর্যাদা আদায় করার পর ফিলিস্তিনের সর্বসাধারণের মধ্যে মাহমুদ আব্বাসের জনপ্রিয়তা অনেক বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পশ্চিম তীর, গাজাসহ বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনিদের আনন্দ মিছিলে তাঁর ছবি নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস এরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের হামলার সময় আব্বাসের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রায় আট দিন সহিংসতার পর মিসরের মধ্যস্থতায় গত ২১ নভেম্বর হামাস ও ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়। ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরও ইসরায়েলের হামলার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হামাস কিছুটা সুবিধা পেয়েছে। আরব বিশ্বের অনেক দেশেই হামাসের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। ইসরায়েলের হামলা শুরুর তিন সপ্তাহ আগে প্রথম আরব রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাতারের আমির গাজা সফর করেন। সহিংসতা শুরুর পর মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিসহ আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বড় একটি দল গাজা ঘুরে গেছে। হামাস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে তারা। কিন্তু আব্বাস সে সময় নীরব ছিলেন। গাজায় সহিংসতা বন্ধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তাঁর। কিন্তু সমঝোতা চুক্তির ব্যাপারে তাঁর তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। বরং জাতিসংঘে সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি না তোলার ব্যাপারে ওবামার অনুরোধ না মানার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লেইলা ফারসাখ বলেন, 'জাতিসংঘে আব্বাসের প্রস্তাব ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংঘাতকে আবারও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে এনেছে। এর মাধ্যমে অসলো চুক্তি ও নিষ্ফল শান্তি আলোচনা নিয়ে জনগণের মধ্যে যে অসন্তোষ আছে, আব্বাস একে আরো উসকে দিলেন। যদিও ইসরায়েলের আগ্রাসন ও বসতি নির্মাণ আগের মতোই থাকছে।'
আব্বাস ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনের অধিকৃত এলাকায় এখন পাঁচ লাখেরও বেশি ইসরায়েলি অবৈধভাবে বসবাস করছে। কিন্তু জাতিসংঘে এই এলাকা খালি করার প্রস্তাব তুললে যুক্তরাষ্ট্র তাতে নিশ্চিতভাবেই ভেটো দেবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ার করেছেন, 'জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বাস্তব পরিস্থিতি পাল্টাতে পারবে না। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি হবে না। বরং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে তাদের দূরে নিয়ে যাবে।' তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, 'সার্বভৌম রাষ্ট্রের' মর্যাদা পেলেও বাস্তবে আব্বাস পরিস্থিতি কতটা সামাল দিতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সূত্র : গালফ টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.