চরাচর-বিশ্ব খাদ্য দিবস by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য। আর আমাদের খাদ্যের প্রধান উৎস হচ্ছে শস্যদানা, যা আসে কৃষি থেকে, প্রকৃতি থেকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এই শস্যদানা বৃদ্ধির ভাবনাটি বিজ্ঞানের এক প্রধানতম ইস্যু হিসেবে গণ্য হতে থাকে চলি্লশের দশকেই। একসময় তা রূপ নেয় অপরিহার্য আন্দোলনে।


কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনকে চরমভাবে ব্যাহত করছে। প্রতিবছর নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি। এরই প্রভাবে বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে অনির্দিষ্টকাল দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পৃথিবীতে জনসংখ্যা হারের চেয়ে খাদ্য উৎপাদনের হার বেশি। তা সত্ত্বেও আশির দশকে যেমন মানুষের হাহাকারে পৃথিবী ভারাক্রান্ত ছিল, আজও অবস্থা সে রকমই। বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ বাস করে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে। ১০০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি ও অপুষ্টিতে মারা যায়। গবেষণামতে, সম্পদের ৮০ শতাংশ ভোগ করছে বিশ্বের ২০ শতাংশ মানুষ। ওই ২০ শতাংশের এক-চতুর্থাংশ সম্পদের সম্রাট হয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এ গবেষণা থেকে স্পষ্ট, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন এর সুষম বণ্টন। কিছু হতাশাব্যঞ্জক পূর্বাভাস সত্ত্বেও ২০২৫ সালে ৮০০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার খাবার জোগানোর মতো সম্পদ বিশ্বে রয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) মতে, 'খাদ্য নিরাপত্তার অর্থ, জমিতে বীজ বপন ও পর্যাপ্ত ফসল ফলাতে বিশ্বব্যাপী কৃষকদের ক্ষমতায়ন, পশু সম্পদের কার্যকর পরিচর্যা ও মৎস্য আহরণ পূর্বক তাদের উৎপাদিত এ খাদ্য যেসব মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাদের কাছে পেঁৗছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে'। সংস্থাটির মতে, পৃথিবীতে এ মুহূর্তে যে ২২টি দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ। এ সময়ে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। তা সত্ত্বেও চাহিদার সঙ্গে উৎপাদন তাল মেলাতে পারছে না। ফলে বাঙালির প্রধান খাদ্য চাল ক্রমেই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট খরা ও বন্যায় অনেক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। বছরে পৃথিবীর ১০ থেকে ৩০ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি হ্রাস, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ও জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাকে আরো হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
প্রতিবছর বাংলাদেশেও ১ শতাংশ হারে কমছে আবাদি জমি। প্রতিবছর জনসংখ্যায় যুক্ত হচ্ছে ২৩ লাখ নতুন মুখ। প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর বাইরে ভূমিকম্পের আতঙ্ক গ্রাস করেছে সারা দেশ তথা রাজধানীর অধিবাসীদের। ঠিক এ রকম সময়েই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। আমাদের এখন প্রয়োজন সুষ্ঠু খাদ্য ব্যবস্থাপনা। যে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব মানুষের তিন বেলা খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হবে অনন্তকাল, যা আমাদের সবার প্রত্যাশা।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.