হলমার্ক কেলেঙ্কারি-ডিজিএম আজিজ ২৪ দিনের রিমান্ডে দুদকে জেরা

হলমার্ককে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার মূল হোতা সোনালী ব্যাংকের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এ কে এম আজিজুর রহমানের তিন মামলায় আট দিন করে মোট ২৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।


গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মাদ আনোয়ার সাদাত এ আদেশ দেন।
গতকাল মামলা তিনটির তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান, উপপরিচালক আক্তার হামিদ ও জয়নুল আবেদীন শিবলী ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন।
রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে রবিবার রাতে র‌্যাব-৩ সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন) শাখার সাবেক এই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা সিএমএম আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য তাঁকে হাজির করা হয়।
শুনানির সময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল করে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেন অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী ও মো. আলী হোসেন। আসামি গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, টাকা উদ্ধার ও সহযোগী আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করা যাবে না। এ ছাড়া একই ধরনের মামলায় কোনো আসামির ১৫ দিনের বেশি রিমান্ড মঞ্জুর করা যাবে না। আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও তাঁরা দাবি করেন।
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল, কবির হোসেইন ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সোনালী ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তাকে দুষ্টচক্রের হোতা ও ডাকাত উল্লেখ করে বলেন, তিনি (আজিজুর) সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার প্রথমে ম্যানেজার, তারপর এজিএম এবং সর্বশেষ ডিজিএম ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ওই সব পদে থেকে হলমার্ককে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। সেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস তদন্তে পাওয়া যায়নি। তিনি যেন ব্যাংকে ডাকাতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
দুদকের আইনজীবীরা বলেন, হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন। এই আসামি ও তানভীরকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর আজিজুর রহমান ও হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ মোট ২৭ জনের নামে রমনা থানায় ১১টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় মোট দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন তানভীরের স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও জিএম তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক এসইও সাইফুল হাসান, ইও আবদুল মতিন, ব্যাংকের ডিএমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, জিএম নওশের আলী খন্দকার, মাহবুবুল হক, আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজী, মোস্তাফিজুর রহমান, ননী গোপাল নাথ, মীর মহিদুর রহমান প্রমুখ।
আজিজকে দুদকের জেরা : হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখার সাবেক ডিজিএম এ কে এম আজিজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে রমনা থানা থেকে দুদক কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দুদক কর্মকর্তারা তাঁকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ ভ্যানে করে আজিজকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে দুদকের তদন্তদলের প্রধান জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীনা জয়নুল আবেদিন শিবলী বলেন, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হলমার্কসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লুটে নেওয়ার কাজে সহায়তাকারী হিসেবে মূল ভূমিকা পালন করেছেন ডিজিএম আজিজ। তিনি বলেন, আজিজুর রহমানকে অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না।
এদিকে, সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখা থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ১৪১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রিন প্রিন্টার্সের কর্মচারী আবুল হোসেনকে। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক গৌতম মিত্র। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবুল হোসেনের নামে একটি প্যাডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান করে হলমার্ক কায়দায় ১৪১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ ঘটনায় এর আগে সোনালী ব্যাংকের ওই শাখার আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ সপ্তাহেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে গৌতম মিত্রকে।

No comments

Powered by Blogger.