দুর্নীতি আইনের ধারণা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে তদন্তদল

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে আসা বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে তাদের প্রথম দফার আলোচনা শেষ করেছে। দলটি আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে আবারও দুদকের সঙ্গে বসবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কমিশনার শাহাবউদ্দিন চুপ্পু।


গতকাল সোমবার রাতে সফররত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় দিনের সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান।
শাহাবউদ্দিন চুপ্পু বলেন, 'তাঁরা আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, আমরাও কিছু পরামর্শ দিয়েছি।
তদন্তকাজে সহযোগিতার বিষয়ে উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছি। বিশেষজ্ঞ প্যানেলটির সঙ্গে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে আবারও দুদকের বৈঠক হবে।' এ আলোচনা স্বার্থক পরিণতির দিকে এগোবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে রূপসী বাংলা হোটেলে নৈশ ভোজ শেষে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ড স্টেইন বলেছেন, দুদকের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দুই দিনের বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্যানেলটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে বলে তিনি জানান।
এর আগে বৈঠক শেষে দুদকের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, 'তারা আমাদের কাছে কিছু কাগজপত্র চেয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতিবিষয়ক আইন, আইনে দুর্নীতির সংজ্ঞা জানতে চেয়েছে তারা। আমরা তাদের সেগুলো জানিয়েছি। আমাদের সঙ্গে তাদের আরো আলোচনা হবে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক প্যানেল পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের সমর্থনে কোনো কাগজপত্র দুদককে দেয়নি।
দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হলে এ দেশের আইনে তা অপরাধ বলে বিবেচ্য কি না, এ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো আইন আছে কি না- এসব বিষয়ে গতকাল দিনভর আলোচনা করেছে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। তারা গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বের হয়ে সরাসরি চলে যায় আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে। সেখানে তারা সারা দিন বাংলাদেশের প্রচলিত আইনগুলো পর্যালোচনা করে বলে জানা গেছে।
আইনজীবী ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বিশেষজ্ঞ এ প্যানেলকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় গতকাল সন্ধ্যায় আইনজীবী ব্যারিস্টার মনজুর হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাদের ধারণা দিয়ে সহায়তা করতে এসেছিলাম।' সরকার, নাকি বিশ্বব্যাংক; কার পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে গেছেন- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি। গত রবিবার রাতে ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বিশ্বব্যাংক আয়োজিত একটি নৈশ ভোজে অংশ নিয়েছিলেন।
দুদকের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে সহায়তা করতে দুদকের পক্ষ থেকে মনজুর হাসানকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
গতকালের পর্যালোচনা সভায় তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি ইউনিটের প্রতিনিধি স্টিভ জিমারম্যান উপস্থিত ছিলেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশেষজ্ঞরা দুদক কার্যালয়ে পৌঁছান।
গতকাল দুপুরে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুদকের তদন্ত এখনো চলছে। তাদের অনুসন্ধান এখনো মামলা করার পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলে জানান তিনি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা আজ মঙ্গলবার আলাদাভাবে নিজ নিজ দেশের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। তাঁরা আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিং করবেন না। তবে খুব দ্রুত বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হবে। তাতে প্যানেলের তিন দিনের ঢাকা সফরের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হবে।
ঢাকায় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এটি প্রথম সফর। ধারাবাহিকভাবে তারা বাংলাদেশে আসবে। এক মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আরো একটি মিশন এ মাসের শেষ দিকে ঢাকায় আসবে। ওই মিশনটি পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর তদারকি আরো কিভাবে জোরদার করা যায়- সেসব বিষয়ে সরকার, এডিবি ও জাইকার সঙ্গে আলোচনা করবে।

No comments

Powered by Blogger.