থ্রিজি ফোন প্রযুক্তি-শুধুই কল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হোক

মোবাইল ফোনে থ্রিজি প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকেও বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোনকে বিলাসসামগ্রী বলে মনে করলেও গত দুই দশকে ধাপে ধাপে এই ফোনসুবিধা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে গেছে।


বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। বলা চলে এমন পরিবার খুবই বিরল, যাদের এ আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমটি নেই। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের অর্জনগুলোর মধ্যে তাই নিঃসন্দেহে মোবাইল ফোনসুবিধার বিস্তৃতি সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। অন্তত আমরা বলার সুযোগ রাখি, আমাদের যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্বমানের নিকটবর্তী অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড- বিটিএল-কে (বর্তমান সিটিসেল) যখন প্রথম মোবাইল টেলিফোনের লাইসেন্স দেওয়া হয় তখন এ অঞ্চলের কোনো দেশে এ প্রযুক্তি আসেনি। তবে নানা কারণে এর প্রসার বিলম্বিত হয়েছে। অথচ পরে এসে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো এগিয়ে গেছে। প্রযুক্তিগত আধুনিক সুবিধাগুলো তাই এখনো উন্নত বিশ্বের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সমান পর্যায়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশে। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে থ্রিজি প্রযুক্তি নিশ্চয়ই আমাদের আশা অনেক বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। আমরা মনে করতে পারি, শিগগিরই হয়তো আমাদের এ খাতটি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে। একই সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে থ্রিজির অগ্রবর্তী ধাপ হিসেবে ফোরজি প্রযুক্তিও আমাদের মোবাইল ফোনকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে বলেও আশা করা যায়।
প্রথমদিকে সরকারি মোবাইল ফোন কম্পানি টেলিটককেই কেবল থ্রিজি প্রযুক্তির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এটা টেলিটকের প্রতি বদান্যতা। অন্য মোবাইল অপারেটরদের উন্মুক্ত নিলামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ লাইসেন্স নিতে হবে। নিলামে যে দর পাওয়া যাবে, টেলিটককেও সে পরিমাণ টাকা লাইসেন্স ফি দিতে হবে। কিন্তু প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হলে এবং তা সামগ্রিকভাবে তৃণমূল পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হলে অন্যদেরও দ্রুত থ্রিজির লাইসেন্স দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহক সেবাদানে আন্তরিকতার ঘাটতির যে দুর্নাম আছে, সেই পথ থেকে টেলিটককে সরে আসতে হবে। থ্রিজি প্রযুক্তিসুবিধা উদ্বোধনের দিনই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যান্ত্রিক ত্রুটি প্রত্যক্ষ করেন। ব্যাপক প্রচারসুবিধার সুবাদে সাধারণ মানুষও দেখতে পেল, প্রধানমন্ত্রীর কথা আজিমপুর গার্লস হাই স্কুলের এক শিক্ষার্থী সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে- এটাই প্রত্যাশিত। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সুবিধা বিস্তৃত হওয়ায় ২৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট-সুবিধা ভোগের অধিকারী হয়েছে। নিশ্চিতভাবে এটাও বড় একটা অর্জন। থ্রিজির মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের আরো বিস্তার হবে। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন অনেক সুবিধা আছে, তেমনি এর অপব্যবহারও মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে তরুণ সমাজ যাতে থ্রিজি মোবাইলের অপব্যবহার না করে, সেদিকে নজর দিতে হবে। এটা পারিবারিক উদ্যোগের মাধ্যমেই সর্বাধিক ফলদায়ক হবে। নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনার অভিযোগ যেন মোবাইল প্রযুক্তির ওপর না বর্তায়। থ্রিজি শুধুই মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হোক। যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাক।

No comments

Powered by Blogger.