দুদককে কোনো তথ্যই দেয়নি বিশ্বব্যাংক! by আদিত্য আরাফাত

টানা দু`দিন বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বৈঠক হলেও কোনো তথ্যই দেয়নি বিশ্বব্যাংক। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রমের সকল তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গেলেও বিশ্বব্যাংক তাদের তরফে কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়নি দুদককে।

সোমবার রাতে শেষ দফা বৈঠক শেষে দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজকে একথা জানায়।
সূত্র জানায়, রোববারের প্রথম বৈঠকে প্যানেলের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য না দেওয়ায় দুদক আশা করেছিল, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির দালিলিক তথ্য কিংবা কানাডা পুলিশের অনুসন্ধান প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল তাদের কাছে উপস্থাপন করবে। কিন্তু সে আশাও পূরণ হয়নি দুদকের।
জানা গেছে, দুদকের পক্ষ থেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিশ্বব্যাংকের প্যানেলকে বলেছেন, ‘‘আপনাদের (বিশ্বব্যাংক) কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত থাকলে তা কমিশনকে দিয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্তে সহযোগিতা করতে পারেন।’’

জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ টিমের প্রধান লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো বলেছেন, ‘‘প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমরা দেবো।’’

সোমবার শেষ দফায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।

এদিন দুপুরের দিকে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্যানেলের সঙ্গে দুদকের বৈঠক কমিশনে হবে না। দু`পক্ষ রাতে নৈশভোজ করবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্যও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,  বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকটি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হবে না।

রাত আটটায় হোটেল রূপসী বাংলায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুদকের বৈঠক হবে, তাই সন্ধ্যা থেকেই শতাধিক সাংবাদিক সেখানে অবস্থান করেছিলেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্বব্যাংকের প্যানেল দুদকে আসেন। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা দুদক কার্যালয়ে এলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। দুদকের প্রধান দুটি প্রবেশদ্বারই বৈঠক চলাকালীন বন্ধ ছিল।

বৈঠক শেষে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, কমিশনার মো: শাহাবুদ্দিন ও দুদকের আইন উপদেষ্টা আনিসুল হককে বেশ মলিন মুখে  বের হতে দেখা গেছে।

দুদকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। দুদক চেয়ারম্যানও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলে সরাসরি গাড়িতে গিয়ে ওঠেন।

দুদকের আইন উপদেষ্টা আনিসুল হক দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সব কাগজপত্র দিয়েছি।’’

``দুদককে বিশেষজ্ঞ প্যানেল কোনো ডুকুমেন্ট দিয়েছে কি?`` --এ প্রশ্নের জবাবে হতাশার সুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘না, আমাদের কিছু দেয়নি।’’

এদিকে কমিশনার শাহাবউদ্দিন গাড়িতে ওঠার সময় সাংবাদিকরা বৈঠকের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ``নেক্টট ডিসকাশন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে।``

রাত সাড়ে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় দুদকের আমন্ত্রণে হোটেল রূপসী বাংলায় নৈশভোজ করছেন বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও বিশ্বব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।

রোববার সোয়া ৩টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যরা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। বিশেষজ্ঞ দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড ওল্ডারম্যান।


শনিবার রাতে তারা ঢাকায় পৌঁছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের ঢাকায় অবস্থান করার কথা রয়েছে।

পদ্মাসেতুর প্রাক পরামর্শক যাচাইতে  দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক চলতি বছরের ২৯ জুন পদ্মাসেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি বাতিল করে।

সরকারের তরফে টানা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর পর আবারও ঋণ দিতে সম্মত হলেও দুর্নীতির তদন্ত অধিকতর জোরদার করার দাবিটি আগের মতোই রেখেছে বিশ্বব্যাংক। তাই বিশ্বব্যাংকের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় দুদক।

৫ অক্টোবর পদ্মাসেতুর দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণে এ প্যানেল গঠনের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন।

No comments

Powered by Blogger.