জঙ্গি সংগঠক গ্রেপ্তার-বোমা ও গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি চাই না

জঙ্গিরা তৎপর আবার। এমন সন্দেহই দানা বেঁধে ওঠে সাম্প্রতিক কিছু সংবাদ পড়ে। মনে করিয়ে দেয় বোমা ও গ্রেনেড হামলার সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা। জঙ্গি দমনে সরকার বেশ সাফল্য লাভের পরও তাদের নির্র্মূল করা সম্ভব হয়নি। অবশিষ্ট জঙ্গিরা তাই সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়।


একই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কিছু ভয়ংকর জঙ্গি আটক হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। ধরা পড়েছে কিছু রোহিঙ্গা এবং পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ফলে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে তাদের শক্তি কমে গেছে কিংবা তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। বরং সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা পর্যালোচনা করলে এটাই মনে হয় যে সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা করতে হবে অতি দ্রুত। লক্ষ রাখতে হবে, যাতে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো চক্রই বাংলাদেশের শান্তি ভঙ্গ করতে না পারে। সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গাদের স্বীকারোক্তি এবং কক্সবাজারের মাদ্রাসা শিক্ষক ও জইশ-ই-মোহাম্মদ বাংলাদেশ শাখার অন্যতম সংগঠক মাওলানা ইউনুসের গ্রেপ্তারের পর সংগত কারণেই মনে আসে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি জঙ্গিদেরও তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে জইশ-ই-মোহাম্মদের বাংলাদেশ শাখার প্রধান সংগঠক সাবের আহমেদ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই সাবের আহমেদের সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতাদেরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
মাঝেমধ্যে যে দুয়েকজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হচ্ছে, তা একটি বিরাট চক্রের অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। জঙ্গি নেটওয়ার্ক, তাদের অর্থায়নের উৎস, দেশি-বিদেশি যোগসাজশ ইত্যাদি খুঁজে বের করতে হবে। সাবধান হতে হবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারেও। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে এরা ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছে বলে বহুবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে একাধিক জঙ্গি সমর্থিত এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা নিয়েও কথা উঠেছে। যে কারণে কিছু এনজিওর কার্যক্রম সেখানে নিষিদ্ধও করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাড়ি জমানোর সংবাদ অতি পুরনো। তারা কিভাবে এই পাসপোর্ট জোগাড় করে সেটিও তলিয়ে দেখতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এরা বিদেশে গিয়ে কেবল জঙ্গিবাদের তালিম নিচ্ছে তা-ই নয়, তারা সেখানে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ওপরও তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ঈদের আনন্দ অনুষ্ঠানের সুবাদে যাতে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় টান না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যেন বাংলাদেশে জঙ্গিদের উত্থান না ঘটে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.