শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান মুলেট- সিরিয়ায় সরকার ও বিরোধীরা ‘যুদ্ধের পথ’ বেছে নিয়েছে

সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীরা ‘যুদ্ধের পথ’ বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান এডমন্ড মুলেট। সিরিয়া থেকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিনি এ মন্তব্য করলেন।


এদিকে সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আলোচনায় বসেছে। সিরিয়ায় রক্তপাত বন্ধে নতুন কী করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে বৈঠকে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি।
এডমন্ড মুলেট বলেন, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা স্পষ্ট, সেখানে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এবং দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। রাজধানী দামেস্ক ও দ্বিতীয় শহর আলেপ্পোর বাইরেও দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘ ও আরব লিগের সিরিয়াবিষয়ক দূতের পদ থেকে কফি আনানের পদত্যাগের দুই সপ্তাহ পর সিরিয়া থেকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকেরাও আর এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সহিংসতা বন্ধে কোনো আশার আলো দেখছেন না। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ২৪ আগস্টের মধ্যে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে যাবে।
সিরিয়ায় সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে বিষয়টি তেমন নয়। সিরিয়াবিষয়ক নতুন দূত হিসেবে আলজেরিয়ার বিশিষ্ট কূটনীতিক লাখদার ব্রাহিমিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা। ইরাক, আফগানিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে দায়িত্ব পালনকারী ব্রাহিমি দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান এডমন্ড মুলেট বলেন, ‘সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই কঠিন। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমরা রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা বাদ দেব।’
সহিংসতা বেড়েছে: সিরিয়া থেকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর সহিংসতা আরও বেড়েছে। গতকাল সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে দামেস্ক, আলেপ্পোসহ বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ লড়াই শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, দামেস্কে প্রধান সামরিক বিমানবন্দরের কাছে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। দামেস্কের দক্ষিণের বেশ কয়েকটি এলাকায় সেনাবাহিনী গোলা নিক্ষেপ করেছে। আলেপ্পো ও এর উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েকটি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে।
আলেপ্পোর সাইফ আল দৌলা এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিন সাসাতি বলেন, ‘আমরা এখন আর দুই পক্ষের লড়াইয়ের শুধু নিরীহ শিকার নই, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করেই সহিংসতা চালাচ্ছে।’
‘কসাইয়ের মতো আচরণ করছেন বাশার’: ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফ্যাবিয়াস অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট বাশার নিজের জনগণের সঙ্গে কসাইয়ের মতো আচরণ করছেন। জর্ডানে পালিয়ে আসা সিরীয় শরণার্থীদের একটি শিবির পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি গতকাল এ মন্তব্য করেন।
ফ্যাবিয়াস বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। বাশার সহিংসতার জন্য দায়ী। তাঁকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আর যত তাড়াতাড়ি তিনি সরে যাবেন, ততই তাঁর জন্য মঙ্গল হবে।’ রয়টার্স, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.