আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন ॥ বিএনপিকে সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিম-লে শুরু হয়েছে নানামুখী গুঞ্জন। তবে অন্তর্র্বতী সরকারের রূপরেখা কি হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার না বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এর কোনটাই স্পষ্ট নয় এখনও। সরকার ও বিরোধী দলের অনড় অবস্থানে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিল হয়ে উঠছে।


নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়েও তৈরি হচ্ছে নানা ধুম্রজাল।
আর এদিকে নানামুখী গুঞ্জনের মধ্যে আগাম নির্বাচনের গুঞ্জনও চলে এসেছে সামনে। বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ না দিতে এ কৌশল নেয়া হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
সূত্রমতে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাদের অবস্থানে অনড় থাকলে পরিস্থিতি বুঝে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের শুরুতেই অর্থাৎ মার্চ বা এপ্রিলে সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারে।
এ ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে না এলে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি জোট থেকে বেরিয়ে এককভাবে নির্বাচন করতে পারে। আর সেটা হলে জাতীয় পার্টিই হবে আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী দল।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের ভারত সফর আগামী নির্বাচনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সফরকালে এরশাদ ভারতের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আমন্ত্রণেই এরশাদ জরুরী ভিত্তিতে ভারত সফর করছেন। আগামী ১৮ আগস্ট তার দেশে ফেরার কথা।
এরই মধ্যে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা শিবশংকর মেননের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের ঝুলে থাকা বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সহ আগামী নির্বাচন নিয়েও এসব বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্রে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরিয়ে না আনার বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে মহাজোটের অপর শরিক জাতীয় পার্টির অবস্থান আরও কঠোর।
আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফিরে না যাওয়ার অবস্থানে অনড় থাকলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচনে যেতে চায়।
তবে বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে সরে না এলে বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে দিয়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে অন্তর্র্বর্তী সরকারে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবের পর বিষয়টি নিয়ে সরকারী ও বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার একটা সম্ভাবনা তৈরি হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এক সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না সেটা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির নির্বাচনে না আসার বিষয়টি স্পষ্ট হলে আওয়ামী লীগ বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করবে। তবু বিরোধী দলকে আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে দেবে না।
সেক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হতে পারে। মহাজোটের শরিকদের নিয়েই এ নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ। আর সেটি হলে মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এরশাদের জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদও এটা চাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে এরশাদের বক্তব্যে এর ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি তিনি রংপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বাদ দিতে হবে।’
এখানে দুই নেত্রী বলতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বোঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এরশাদ বিএনপিকেই ইঙ্গিত করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন বলে জাতীয় পার্টির এক নেতা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিলে গত্যন্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচনে না এলেও নির্বাচনকামী জনগণের সামনে তারা আন্দোলনে সুবিধা করতে পারবে না। নির্বাচনে না এলে রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিক বার গত নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপির বিপর্যয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি যদি আর ক’টি আসন বেশি পেত অথবা আমরা উপ-নির্বাচনের আসনগুলো জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতাম তাহলে বিএনপি বিরোধী দলেও বসতে পারত না।’
এছাড়া ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে সংসদ থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। বিএনপি পদত্যাগ করলে সঙ্গে সঙ্গে উপনির্বাচন দিয়ে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলে বসানোর পরিকল্পনার পাল্টা গুঞ্জনও শোনা যায়।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ দলের কেউ কেউ তখন প্রকাশ্যেই বলেন, বিএনপি পদত্যাগ করলে সমস্যা নেই। এরশাদ সাহেব বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য বসে আছেন।

No comments

Powered by Blogger.