পবিত্র কোরআনের আলো-ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় আল্লাহর পরীক্ষা থেকেও শিক্ষা নেয়নি

১২৯. ক্বা-লূ ঊযীনা মিন্ ক্বাবলি আন তা'তীইয়ানা ওয়া মিম্ বা'দি মা জি'তানা; ক্বা-লা আ'ছা রাব্বুকুম আন ইউহ্লিকা আ'দুওয়্যাকুম ওয়া ইয়াছতাখ্লিফাকুম ফিল আরদ্বি ফাইয়ানযুরা কাইফা তা'মালূন। ১৩০. ওয়া লাক্বাদ আখায্না আ-লা ফিরআ'ওনা বিচ্ছিনীনা ওয়া নাক্বসিম্ মিনাচ্ছামা-রা-তি লাআ'ল্লাহুম ইয়ায্যাক্কারূন।


১৩১. ফাইযা জা-আতহুমুল হাছানাতু ক্বা-লূ লানা হা-যিহী; ওয়া ইন তুসিবহুম ছায়্যিআতুন ইয়্যাত্ত্বাইয়্যারূ বিমূছা ওয়া মাম্ মাআ'হূ; আলা ইন্নামা ত্বা-য়িরুহুম ই'নদাল্লা-হি ওয়া লাকিন্না আকছারাহুম লা-ইয়া'লামূন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১২৯-১৩১]

অনুবাদ : ১২৯. তারা (বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের লোকেরা) বলল, আমাদের তো আপনার আগমনের আগেও নিপীড়ন করা হয়েছে এবং আপনার আগমনের পরও তা-ই করা হচ্ছে। মুসা বললেন, হয়তো খুব তাড়াতাড়িই তোমাদের প্রভু তোমাদের শত্রুদের ধ্বংস করে দেবেন এবং পৃথিবীতে তোমাদের তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর তিনি দেখতে চাইবেন তোমরা কী রকম কাজ করো।
১৩০. আমি ফেরাউনের সম্প্রদায়কে দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসলহানির ক্ষতিতে আক্রান্ত করলাম, যাতে তারা সতর্ক হয়।
১৩১. (অথচ এদের আচরণ ছিল এমন যে) যখন তাদের সুদিন আসত তখন তারা বলত, এটা তো আমাদের প্রাপ্য ছিল। আবার যখন কোনো বিপদ দেখা দিত, তখন তারা তাদের দুর্ভাগ্যের দায় মুসা ও তাঁর সঙ্গীদের ওপর চাপাত। জেনে রেখো, এই দুর্ভাগ্য তাদেরই অর্জন, যা আল্লাহর জ্ঞানে ছিল, কিন্তু তাদের অনেকেই সে সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল না।

ব্যাখ্যা : বনি ইসরাইল সম্প্রদায় মিসরে এসেছিল এশিয়ার ফিলিস্তিন এলাকা থেকে। তারা মহা পয়গম্বর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধর। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জ্যেষ্ঠ স্ত্রী সারার গর্ভজাত সন্তান ইসহাক (আ.)-এর বংশধররা পরবর্তীকালে বনি ইসরাইল বলে আখ্যায়িত হয়েছে। গোড়াতে তাঁরা ছিলেন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে অবস্থিত প্রাচীন ব্যাবিলন সভ্যতার শাসকগোষ্ঠীর লোক। মিসরীয়রা, বিশেষ করে মিসরের ফারাওরা কখনোই তাদের স্বজাতির লোক মনে করেনি। মিসরে প্রথম ক্রীতদাস হয়ে এসেছিলেন ইয়াকুবপুত্র ইউসুফ। মিসরের এককালের প্রধানমন্ত্রী আজিজ মেসেরের সুপারিশে দেশের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁকে মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছিল। মন্ত্রী ইউসুফ তাঁর পিতা-মাতা ও ১১ ভাইকে সেখানে নিয়ে এসেছিলেন। এভাবেই বনি ইসরাইলদের মিসরে আসা। এরপর বনি ইসরাইলদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার পরিপ্রেক্ষিতে মিসরীয় শাসকগোষ্ঠী এদের দাসে পরিণত করে। নবী মুসার জন্মের আগে থেকেই বনি ইসরাইলরা মিসরীয় শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত ছিল। মুসা (আ.)-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠার ঘটনাটাও ছিল এক অসাধারণ ঘটনা। এরপর তিনি যখন সিনাই পাহাড় থেকে নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে মিসরে ফেরেন তখন বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ফারাওয়ের সিংহাসন কেঁপে ওঠে। সেই বৈপ্লবিক ঘটনাপ্রবাহের কিছু কথাই আগের আয়াতগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। ১২৯ নম্বর আয়াতে এই পরিস্থিতির একটা পর্যায়ে এসে নবী হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যকার কথোপকথন উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা মিসরে তাদের দুরবস্থার কথা জানাচ্ছে এবং তিনি তাদের ভবিষ্যতের সুদিনের সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি তাদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সুদিন ফিরিয়ে দিয়ে দেখতে চাইবেন, তোমরা কী রকম কাজ করো। প্রসঙ্গত, পরবর্তী আয়াতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের সম্প্রদায়ের দুর্ভিক্ষ ও ফসলহানির মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। তারা সুদিন এলে এর জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, বরং এটা নিজেদের প্রাপ্য বলে দাবি করে। আর দুর্দিন এলে সে জন্য অন্যদের, বিশেষ করে মুসা ও তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের দায়ী করে। অথচ দায় পুরোটাই তাদের নিজেদের। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফলই ভোগ করে, কিন্তু সেটা খেয়াল করে দেখে না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.