প্রধানমন্ত্রীকে পৃথিবী থেকে মাইনাসের চক্রান্ত চলছে- যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ॥ নাসিম

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে মাইনাসের চক্রান্ত চলছে। বিএনপি-জামায়াত সব সময়ই ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে ফার্স্ট। আর আওয়ামী লীগ আন্দোলন ও ভোটের রাজনীতিতে ফার্স্ট, চক্রান্তে লাস্ট।
তবে সকলকে মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনা শেষ হয়ে গেলে দেশ আবার একাত্তরের ঘাতকদের দখলে চলে যাবে, সৃষ্টি হবে জঙ্গীবাদ। মানুষের আর শান্তি থাকবে না। তাই যে কোন মূল্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শুক্রবার বিকেলে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬ জেলায় বোমা হামলা স্মরণে দিনটিকে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদবিরোধী দিবস পালনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এ প্রতিবাদসভার আয়োজন করে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজউদ্দীন মিয়া, শেখ বজলুর রহমান, মুকুল চৌধুরী, আওলাদ হোসেন ও শাহে আলম মুরাদ।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান যখন খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলতে চাচ্ছিলেন না তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত ধরে বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে বুঝিয়ে খালেদা জিয়াকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে মিলিয়ে দেন। অথচ সেই খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে আত্মস্বীকৃত খুনী রশিদ-হুদাকে এমপি বানিয়েছিলেন। জাতির পিতার হত্যার দিন প্রতিহিংসাপরায়ণ খালেদা জিয়া ঘটা করে বিতর্কিত জš§দিন পালন করেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মদদ দেন। আসলে চক্রান্তের রাজনীতিতে বিএনপি অভ্যস্ত বলেই তারা সব সময় অপরাধীদের মদদ দেয়। বর্তমান সরকারের সাফল্য তুলে ধরে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশে বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করেছেন বলে এবার রমজান মাসে এক মিনিটের জন্যও লোডশেডিং হয়নি। মাত্র তিন বছরের মধ্যে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বড় কোন ভুল বর্তমান সরকার করেনি। বিদ্যুত সমস্যা সমাধানের কারণে বাংলার জনগণ শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনবে। যে কোন মূল্যে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আন্দোলন কিংবা আন্দোলন মোকাবেলা নয়, ঈদের পর আমরা নির্বাচনী কাজে নামব। জনগণকে বলব, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ও শান্তির দেশে পরিণত করতে শেখ হাসিনাকে আর একবার সুযোগ দিন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তারেক রহমান ও আইএসআইয়ের অর্থায়নে এই দেশে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানানোর জন্য ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা হামলা চালিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করার জন্য দেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে রূপান্তরিত করতে সেদিন তারা বোমা নিক্ষেপ করছিল। বাংলাভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানদের সৃষ্টি করেছিল। তারা জানান দিল সারা বাংলাদেশে তারা প্রস্তুত। খালেদা জিয়া-নিজামীরা সেদিন আমাদের জানান দিয়েছিল যে দেশ জঙ্গীবাদের। আমরা সেদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। জনগণও ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র দেখতে চায় না। কিন্তু তারা এখন আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত আবারও বাংলাভাই শায়খ রহমান সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। যে কোন মূল্যে ওদের চক্রান্ত ধ্বংস করতে হবে বলে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে দেশকে গ্রাস করতে চেয়েছিল। সারাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তারা। অথচ আজকে বিভিন্ন সমস্যার ধুয়া তোলা হয়। আমাদের ইতিহাসকে স্মরণ রাখতে হবে। খালেদা জিয়ার তৎকালীন শাসনের কথা সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। অন্যথায় আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারি। বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। পাথর সমান কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, খালেদা জিয়ার হুঙ্কার নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই। আমাদের সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের কাজ হলো আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজপথে টিকে থাকা। আর দুষ্ট লোকগুলোকে চিরতরে শেষ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের মদদ না থাকলে একদিনে ৫০০ বোমা হামলা হতে পারে না।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি একাত্তরের ঘাতকদের দোসররা এ দেশে পাকিস্তানী আদর্শ কায়েম করতে চায়। এই শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। চার নেতাকে হত্যা করেছে। এরাই ১৭ আগস্ট বোমা হামলাও চালিয়েছে। তিনি বলেন, এরা এখনও দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। বিএনপি এবং জামায়াতকে আলাদা করে দেখার অবকাশ নাই। তারা দেশটাকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাপের লেজে পা দিয়েছি। এই সাপকে শেষ করতে হবে। নইলে যে কোন মুহূর্তে ছোবল মারতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিএনপি ঈদের পরে ছোবল মারার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে। তারা দেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা করেই যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.