এই দিনে-বাবা, তোমাকে ভালোবাসি by শারমিন নাহার

যে কথাটা হয়তো বাবাকে বলা হয়নি কখনো। যে মানুষটার জন্য রাজ্যের ভালোবাসা জমা হয়ে আছে ভেতরে। আর হবেই না কেন? সন্তান বড় হয়ে গেলে বাবার সঙ্গে একধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ এই বাবার পায়ে পা রেখেই হয়তো সন্তান প্রথম হাঁটা শিখেছে। কিংবা বাবার হাতের মাঝে হাত রেখে শিখেছে কোনো বর্ণ লিখতে।


সময়ের ব্যবধানে সেই বাবা কেবল সংসারের কর্তা বনেই যান। এবারের বাবা দিবসের লেখাটা তাদের নিয়ে, যারা বাবাকে বলতে চায় অনেক কিছু।
তারিখের হিসাবে নয়, বারের হিসাবে জুনের তৃতীয় রোববাব। আজ বাবা দিবস। যান্ত্রিক এই জীবনে একবার কি মনে পড়ে সেই নিভৃতচারী মানুষটার কথা। আর বাবা দিবসের লেখায় সেই বাবার সন্তানেরা বলবে বাবাকে না-বলা নানা কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিনের সঙ্গে কথা হয় বাবাকে নিয়ে। ফলিত পদার্থবিদ্যার শিক্ষার্থী আফরিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকার কারণে বাবার থেকে দূরে থাকতে হয়। কথা তেমন হয়ই না। মুঠোফোনে ফোন করলে বাবা ফোনটা রিসিভ করেই মাকে দিয়ে দেন। দীর্ঘদিন বাবার সঙ্গে কথাই হয় না। তবে মায়ের সঙ্গে এমনটা কখনো হয়নি। আফরিন আরও বলেন, ‘এবার বাবা দিবসে বাবার জন্য কিনেছি বাবার পছন্দের পাঞ্জাবি। আর লিখেছি ছোট একটা চিরকুট। বাবা হয়তো পড়েই অবাক হবেন। সেই ছোট আফরিন এখন কত বড়। কত্ত ভালোবাসে বাবাকে।’
বলতে বলতে আফরিনের অবয়বে এমন এক আভা উঠে আসে, যেন মনে হয় বাবার ভালোবাসায় এখনই সিক্ত হয়ে গেছে ও!
পড়াশোনার কারণেই বিদেশে থাকছেন শর্মি। মুঠোফোনে শর্মির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা সময় বাবার সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা হতো। ক্রিকেট খেলা দেখা, একসঙ্গে বিকেলের কফি খাওয়া বা কারণে-অকারণে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়া। আর এর সবকিছুর সঙ্গী ছিলেন বাবা। তবে দূরত্বের কারণে সবই এখন স্মৃতি। এখন বাবার কথা মনে হওয়া মানেই এসব স্মৃতিরোমন্থন করা। শর্মি বলেন, ‘এবারের বাবা দিবসে আমি বাবার কাছে নেই। বাবা হয়তো কেক কাটবেন না। নীরবেই কাটবে তাঁর পুরোটা দিন। তবু বাবাকে আরেকবার বলতে চাই, “তোমাকে অনেক মিস করি বাবা”।’
কিংবা বলা যায়, চলন্ত ট্রেন থেকে হাত নাড়তে থাকা বাবার মুখটা বারবার মনে পড়ে নিপার। কী যেন বলতে চায় বাবাকে। হয়তো অব্যক্ত সেই কথা। বাবাকে বলতে গিয়ে অনেকবার থেমে গেছে নিপা। হ্যাঁ, বাবাকে বলা হয়নি, বাবার জন্য সে প্রতি রাতে ডায়েরিতে বরাদ্দ রেখেছে একটা করে পাতা। বাবা হয়তো জানবেন না সে কথা। ‘আয় খুকু আয়’ বলে গান শোনাতেন যে নিপাকে, সেই নিপা এখন অন্যের ঘরনি, তবে ভুলে যায়নি বাবার কথা।
বাবাকে নিয়ে এমন নানা কথা আছে। তবে বাবা দিবস পালনের শুরুটা ইতিহাসের পাতা থেকে জেনে নেওয়া যাক। খুব বেশি দিন আগে নয়, ১৯০৯ সালে মায়ের প্রতি ভালোবাসায় ‘মা দিবস’ পালন শুরু হয়। তখন সনোরা স্মার্ট ডড নামের একটি মেয়ে ‘বাবা দিবস’ পালনের কথা ভাবেন। ১৯১০ সালের ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্পেকারে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। কিন্তু সব শ্রেণীর মানুষ তখন দিনটি স্বীকার করে নিতে পারেনি। ১৯২৬ সালে নিউইয়র্কে বাবা দিবস পালন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাবা দিবস পালিত হয়। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে। আর নগরের দোকানগুলো বাবা দিবস ঘিরে উপহারের পসরা সাজাচ্ছে।
নিন্দুকেরা বলবে হয়তো, বাবাকে কি একটা দিনই মনে করব? তাদের জন্য কথা হলো, বাবাকে সব সময়ই ভালোবাসি। তবে এই দিনে বিশেষভাবে মনে করা।
ইতিহাসের বলয়ের বাইরে এলে বলতে হয়, ‘বাবা’ খুব ছোট শব্দ। তবে এই শব্দের মাঝে আছে নির্ভরতার আবেশ। ‘হৈমন্তী’ গল্পে হৈমন্তীর বাবাই ছিল তার সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের দীপু নম্বর টু উপন্যাসে বাবা-সন্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চয়ই আমাদের ভাবায়।
আজ এই দিনে সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দুদণ্ড বাবার পাশে বসি। কিছু সময় কাটাই বাবার সঙ্গে। আরেকবার বলি, বাবা, তোমাকে ভালোবাসি।
শারমিন নাহার

No comments

Powered by Blogger.