রাফায়েল নাদাল-ক্লে কোর্টের রাজা

পিট সাম্প্রাস, জন ম্যাকেনরোর মতো কিংবদন্তিদেরও লজ্জায় লাল হতে হয়েছে রোলাঁ গারোঁর লাল মাটিতে। সেখানেই আবার লালগালিচা পেয়ে এসেছেন বিয়ন বোর্গ। পেয়েছেন রাফায়েল নাদালও। তবে এবার যা পেলেন তা লালগালিচারও ঊর্ধ্বে, যেন মঙ্গল গ্রহের লাল জমিনে বিজয়ের লাল ঝান্ডা ওড়ানো! সাতবার ফ্রেঞ্চ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন


হওয়াটাকে কী বলবেন আর? প্রচণ্ড স্ট্যামিনা আর ধৈর্যে এই মঞ্চে নিজেকে সফল দেখার খিদেটা যেন অনন্ত, অফুরান এই স্প্যানিয়ার্ডের। তারই ফল পেলেন বোর্গের ছয়টি ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের রেকর্ড পেছনে ফেলে। অবশ্যই সেটা শান্ত চিত্ত, চাপহীন মেজাজ আর সুপার ফিটনেসের কারণে।
টানা চার গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল নোভাক জোকোভিচের সামনেও। সর্বশেষ ১৯৬৯ সালে এই কীর্তিটা ছিল রড লেভারের। সে বছরই আবার চাঁদে প্রথম পা রেখেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং। কিন্তু গত ৪৩ বছরে কত শত মানুষ চাঁদে গেলেও টানা চারটি গ্র্যান্ড স্লাম আর জিততে পারেননি কেউই। সে উত্তেজনাতেই হয়তো ফাইনালে একটু বেশিই স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন জোকোভিচ। নইলে নাদালের ম্যাচ পয়েন্টের সময় ডাবল ফল্ট করবেন কেন?
যুগে যুগে বোর্গ-ম্যাকেনরো, সাম্প্রাস-আগাসিদের যে ব্যক্তি দ্বৈরথ দেখেছে বিশ্ব টেনিস, সেখানে শীর্ষস্থানটা কিন্তু অনেকের চোখেই নাদাল-ফেদেরারের। অথচ ফেদেরারের রত্নখচিত ঝুলিতেও নেই ফ্রেঞ্চ ওপেনে নাদালের বিপক্ষে জয়। রোলাঁ গারোঁর সাত শিরোপার চারটির ফাইনালেই তিনি হারিয়েছেন ফেদেরারকে! এমনকি এখানে খেলা ৫৩ ম্যাচে হার মাত্র একটিতেই। তাই প্রশ্ন জাগতেই পারে কোন মায়াজালে প্যারিসের আরেক আইফেল টাওয়ার হয়ে গেছেন নাদাল?
আসলে এই কোর্টে যে স্ট্যামিনা আর ধৈর্য দরকার সেটা ভালোই আছে নাদালের। বেসলাইন থেকে যেমন খেলতে পারেন আক্রমণাত্মক সব শট, তেমনি প্রয়োজনে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে পারেন রক্ষণের খোলসেও। তাঁর বিষাক্ত টপস্পিন আসে অনেক উঁচুতে। ফেদেরার, জোকোভিচের মতো ডানহাতিদের জন্য যা পড়ে ব্যাকহ্যান্ডে। কঠিন হয়ে যায় এটা সামলানোই। এবারের টুর্নামেন্টেই চতুর্থ রাউন্ড ছাড়া কোনো ম্যাচেই ৩টির বেশি এইস নেই নাদালের। অর্থাৎ তাঁর শক্তিটা সার্ভিসে নয়, সেই টপস্পিনে। ফাইনালে বৃষ্টির জন্য যা আবার ভোঁতা হতে চলেছিল প্রায়। বৃষ্টিতে কোর্ট পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় স্পিনগুলো খুব বেশি উঁচুতে উঠছিল না। তাই দুই সেট আর ০-২ গেমে পিছিয়ে থাকা জোকোভিচ ৬-২-এ জিতে নেন তৃতীয় সেট। এটিই আবার এবারের আসরে একমাত্র সেট হার নাদালের! ভাগ্যিস বৃষ্টিতে স্থগিত হয়েছিল সেদিনের খেলা, নইলে হয়তো সাতটি ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে সপ্তম স্বর্গে যাওয়া হতো না নাদালের।
বোর্গকে ছাড়িয়ে সাতটি ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতায় অনেকে তুলনা টানতে পারেন দুজনের মধ্যে। কিন্তু লম্বা চুল আর ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ চরিত্রের বোর্গের সঙ্গে তুলনা চলে না লাজুক নাদালের। দুজন দুই যুগের খেলোয়াড়। একজন ডানহাতি, অন্যজন খেলেন বাঁ হাতে। একজন খেলেছেন কাঠের র‌্যাকেটে তো আরেকজন অত্যাধুনিক ভারী র‌্যাকেটে। তবে রোলাঁ গারোঁয় দুজনই প্রথম জিতেছেন টিনএজ বয়সে। আর দুজনেরই এখানে আছে টানা চারটি করে শিরোপা। কিন্তু নাদাল যেখানে জিতেছেন ক্যারিয়ার স্লাম, সেখানে বোর্গের অধরা রয়ে গেছে ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি। ইউএস ওপেনে ১০ বারের চেষ্টায় চারবার ফাইনাল খেলেও ছিঁড়েনি শিরোপার শিকে। বোর্গের যাঁরা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সেই কোনর্স, ম্যাকেনরোরা কিন্তু ক্লে-র আহামারি খেলোয়াড় নন। অথচ ফেদেরার, জোকোভিচ, নাদাল মিলে জিতেছেন গত ২৯ গ্র্যান্ড স্লামের ২৮টিই। ফেদেরার তো রোলাঁ গারোঁর ফাইনালই খেলেছেন পাঁচবার। তাই রোলাঁ গারোঁর তো বটেই ক্লেরই সর্বকালের সেরা বলা যায় নাদালকে।

গ্র্যান্ড স্লাম রেকর্ড
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: ২০০৯,
ফ্রেঞ্চ ওপেন: ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০১০, ২০১১, ২০১২, উইম্বলডন: ২০০৮, ২০১০, ইউএস ওপেন: ২০১০

No comments

Powered by Blogger.