নারী নিগ্রহ-যৌন হয়রানির সংজ্ঞা কে দেবে?

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ূয়া এক কিশোরী সহপাঠীর কাছে উত্ত্যক্ত হয়ে ও মারধর খেয়ে লজ্জা-অপমানে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার সমকালে প্রকাশিত এ খবরে বলা হয়, সখীপুর পৌরসভার এক কাউন্সিলর স্বীকার করেছেন, অভিযুক্ত স্বপন বখাটে ও দুষ্ট প্রকৃতির এবং তার বিচার হওয়া উচিত।


সখীপুরের কিশোরী সোনিয়া আক্তার ন্যায়বিচার মিলবে, এমন ভরসা হয়তো করেনি। সমাজের প্রতি, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এক ধরনের অভিমান হয়তো তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। এই কিশোরীটি যদি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীর অপমানিত হওয়ার ঘটনা জানত, তাহলে এ ধারণা আরও বদ্ধমূলই হতো। ওই ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বখাটে আবির চৌধুরী জোর করে তার রিকশায় উঠে পড়ে এবং অশালীন আচরণ করে। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি থানায় জানালে পুলিশ বখাটেকে বাড়িতে না পেয়ে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। পুত্রের অপরাধে পিতাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারে কি-না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু এ ঘটনায় হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সায়েদুর রহমান যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা বখাটে দমন নয়, বরং তাদের উৎসাহিতই করবে। তিনি থানায় মামলা না করার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবারকে শাসান এবং সমঝোতা করে দেওয়া হবে বলে অভিযুক্তের বাবাকে থানা থেকে নিয়ে যান। তার বিবেচনায়, ছাত্রীকে যৌন হয়রানির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি জনপ্রতিনিধি, কিন্তু জনগণের আস্থার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন, এমনটি বলার উপায় নেই। এ ধরনের অপরাধে সালিশ-সমঝোতার একটিই রায় হওয়া উচিত_ অভিযুক্তকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া এবং এ প্রক্রিয়ায় যেন কেউ বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা। উপজেলা চেয়ারম্যান জনমত সংগঠিত করতেও সচেষ্ট হতে পারতেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত ভিন্ন হিসাব করেছেন, যেখানে ভোটের স্বার্থ মুখ্য। তবে এ পথে সমাজের কল্যাণ নেই। নারীদের প্রতি অবিচার ও অন্যায় আচরণের প্রতিকার নেই। এ বোধই সোনিয়া আক্তারকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে হরিরামপুরের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীটিকে যেন হতাশা গ্রাস না করে, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে বিস্মৃত না হয়, এটাই প্রত্যাশা থাকবে। জনপ্রতিনিধিরাও নিশ্চয়ই সংকীর্ণ স্বার্থ নয়, বরং বৃহত্তর সমাজের স্বার্থ বড় করে দেখবেন।
 

No comments

Powered by Blogger.