বিডিআর বিদ্রোহের বিচার-১৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ৬১১ জনের সাজা

বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের মামলায় ১৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ৬২১ আসামির মধ্যে ৬১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে ১০ জনকে। বিজিবির নিজস্ব আইনের এই মামলায় সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৫ জনকে।


সবচেয়ে কম চার মাসের কারাদণ্ড হয়েছে ৪৪ জনের। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককেই ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৮-এ গতকাল শনিবার সকালে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি বিজিবির উপমহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সায়ীদ খান এ রায় ঘোষণা করেন। অভিযোগ দায়েরের প্রায় দুই বছর পর রায় দেওয়া হলো।
রায়ে ৫৫ জনের সাত বছরের সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়াও ১০ জনকে সাড়ে ছয় বছর, ৪১ জনকে ছয় বছর, তিনজনকে সাড়ে পাঁচ বছর, ৬৬ জনকে পাঁচ বছর, একজনকে সাড়ে চার বছর, ৭৩ জনকে চার বছর, ২১ জনকে সাড়ে তিন বছর, ১২৭ জনকে তিন বছর, ২৯ জনকে আড়াই বছর, ১১৪ জনকে দুই বছর, ১২ জনকে দেড় বছর, ২৮ জনকে এক বছর, ১৮ জনকে ছয় মাস এবং ১৩ জনকে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে ২৯৩ জন পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলারও আসামি। তাদের বিচার চলছে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে পিলখানায় ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সেনা, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে দরবার হলে আনা-নেওয়া করতে দেখা যায়। প্রত্যেক আসামির পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি ছিল। আসামিদের মধ্যে ১৬ জন চার্জ গঠনের সময় নিজেদের দোষ স্বীকার করেন। তাঁদের মধ্যে ছয় আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় রায় ঘোষণা শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর পৌনে ২টায়।
২০০৯ সালে পিলখানায় দরবার হলে যিনি বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, সেই সিপাহি মাইন এই ১৩ ব্যাটালিয়নের সদস্য। তৎকালীন ১৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সুবেদার মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে পিলখানায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে ৬২৩ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই দিনই আদালত তা আমলে নেন। এই মামলার দুই আসামি কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) নিজস্ব আইনে বিশেষ আদালতে বিদ্রোহের আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সদর দপ্তর পিলখানায় ১১টি ইউনিটসহ সারা দেশের মোট ৫৭টি ইউনিটের ছয় হাজার ৪৬ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার চলে। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর রাঙামাটির রাজনগরে ১২ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম বিচার শুরু হয়। তবে প্রথম রায় ঘোষণা হয় ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল পঞ্চগড়ে ২৫ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের আসামিদের বিরুদ্ধে। ঢাকার বাইরের ইউনিটের মধ্যে সর্বশেষ রায় ঘোষণা হয় ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল দিনাজপুরে। পিলখানার ১১টি ইউনিটে আসামির সংখ্যা চার হাজার ৯৪ জন। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রেকর্ড উইংয়ের ১১১ জন এবং গত বছর ১১ মে ঢাকা সেক্টর সদরের ৮৪ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হয়। গত বছর ৬ জুন রাইফেল সিকিউরিটি ইউনিটের ১১৩ জন এবং ২৭ জুন ২৪ ব্যাটালিয়নের ৬৬৬ জন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়। গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর সিগন্যাল সেক্টরের ১৮৭ জন আসামিকে সাজা দেওয়া হয়। গত ৫ মে রায় ঘোষণা করা হয় ৩৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ৩১০ আসামির বিরুদ্ধে।

No comments

Powered by Blogger.