ডিমের বাজারে আগুন-ডজনের দামে হালি

ডিম নিয়ে গ্রামবাংলায় প্রচলিত একটি প্রবাদ_ 'ডিম পাড়ে হাঁসে_ খায় বাগডাশে।' ডিম পাড়ার ব্যাপারে মুরগিরা যত্নশীল হলেও হাঁস এ বিষয়ে কিছুটা উদাসীন। পুকুরের ধারে, ক্ষেতে-খামারে ডিম দেওয়ার ব্যাপারে হাঁস সিদ্ধহস্ত। যথাস্থানে ডিম না দেওয়ার কারণে হাঁসের এই ডিম গৃহস্থের কাজে লাগে না, বাচ্চা ফোটানোর সুযোগও থাকে না।


ফলে ডিম দিয়ে গৃহস্থের সমাদরটুকুও হাঁসের ভাগ্যে জোটে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিম চলে যায় শেয়াল, বাগডাশসহ বিভিন্ন বন্যজন্তুর পেটে। ডিম নিয়ে বাজারে যে গোল বেধেছে তার কেন্দ্রে অবশ্য হাঁসের ডিম নেই। আলোচনার কেন্দ্রে এখন মুরগির ডিমই। এমন নয় যে, মুরগি ডিম দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অথবা খামারে ডিম না দিয়ে বনেবাদাড়ে ডিম দিতে শুরু করেছে। মুরগি যথাস্থানে, যথানিয়মেই ডিম দেয়, কিন্তু বাগডাশে তা আত্মস্থ করে ফেলছে বাজারে পেঁৗছানোর আগেই। খবরে প্রকাশ, বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কারণে কিছু খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরবরাহও কমেছে। এই কমে যাওয়া সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়ে ফায়দা তুলছে কিছু ব্যবসায়ী। সরবরাহ কম বলে দামও এখন আকাশছোঁয়া। কয়েক বছর আগে এক ডজন কিনতে যা ব্যয় পড়ত, এখন তাতে মেলে এক হালি। একদা এ দেশে ডিম ছিল গরিবের বিশেষ পছন্দনীয় আহার। আমিষসহ নানা পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান ডিম থেকেই মিলত। ডিমের সঙ্গে আলুভর্তা ভাত দিয়ে তৃপ্তিকর একটি ডিশ তৈরি হতে পারত। কিন্তু ৪০ থেকে ৪৪ টাকা হালির ডিমকে এখন আর স্বল্পমূল্যের আহার বলার জো নেই। শুধু গরিব নয়, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে ডিম জনপ্রিয় খাবার। দুপুর বা রাতের খাবারের মূল ডিশ হিসেবে ডিমের ব্যবহার সেখানে না থাকলেও সকাল ও বিকেলের খাবারে ডিমের উজ্জ্বল উপস্থিতি। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই ডিম একটি কমন খাবার। জাতিতে জাতিতে খাদ্য রুচির ভেদ আছে। একটি খাবার কারও পছন্দের, কারও অপছন্দের। কিন্তু ডিম পৃথিবীজুড়েই সবার পছন্দের খাবার। পৃথিবীব্যাপী ডিমের চাহিদা একে একটি শিল্পের মর্যাদা দিয়েছে। আর শুধু এ কালেই নয়, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ডিম মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের অঞ্চলে অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতবর্ষে খ্রিস্টপূর্ব ৭ হাজার ৫০০ অব্দে বন্য মুরগিকে পোষ মানানো হয়েছিল ডিমের প্রয়োজনে। আজকের মতো, প্রাগৈতিহাসিক মানুষের কাছেও ডিম ছিল সহজপ্রাপ্য, সহজ প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযুক্ত একটি পুষ্টিকর খাবার। তখন হয়তো অমলেট, মামলেট, ফ্রাই, ফুল বয়েল, হাফ বয়েল ইত্যাদি বাহারি ডিশ তৈরি হয়নি। কিন্তু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো এসিড, ভিটামিন, মিনারেল, ফলিক এসিড, আয়রনের সংস্থান ডিম থেকে হতো। ডিম হাতের কাছে থাকলে পুষ্টির ব্যবস্থাও হাতের কাছে থাকে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ এমনকি শ্রেণী নির্বিশেষে পুষ্টি বিতরণে মুরগির ডিমের যে আবেদন তা ডিমকে সহস্র বছরের আলোয় উজ্জ্বল করে রেখেছে। কিন্তু ডিমের অগি্নমূল্য কি সে উপস্থিতির উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পারবে? সামনে রমজান মাস, পুষ্টিকর ও মানসম্মত খাবার যথাযথ মূল্যে সরবরাহ করতে পারা প্রতি রমজানেই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ডিমসহ নানা পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য সে চ্যালেঞ্জটিকে এখনই বাড়িয়ে তুলছে। আমরা আশা করব, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো এখনই লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা নেবে। ডিম থাকবে সব ক্রেতার নাগালের মধ্যে।
 

No comments

Powered by Blogger.