জনগণের টাকার জবাবদিহি কোথায়?-সড়ক নির্মাণের খরচ ও সময়

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ সম্পর্কে শনিবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার তথ্যগুলো এক কথায় হতাশাব্যঞ্জক। কাজের শম্বুকগতির সমান্তরালে বিপুল বর্ধিত ব্যয়ের প্রাক্কলনের খবরে প্রশ্ন জাগে, এখানে জবাবদিহি কোথায়? জবাবদিহি চাওয়ার কেউ কি আদৌ আছে?


ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটির অধীনে মোট ৮৮ কিলোমিটার পথ চারটি লেনে উন্নীত করার কথা। এর একটি অংশ মাওনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার। এই কাজ শেষ হওয়ার কথা মোট ৩০ মাসের মধ্যে। কাজ শুরুর পর পেরিয়ে গেছে ১৭টি মাস, কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ। অর্ধেকের বেশি সময়ে কাজের অগ্রগতি যদি হয় এই, তাহলে বাকি অর্ধেকের কম সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি কী করে শেষ হতে পারে? সে সম্ভাবনা আদৌ নেই। এ প্রকল্পের মেয়াদ নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘায়িত হবে, তার ফলে ব্যয়ও বেড়ে যাবে প্রচুর পরিমাণে। নির্মাণপ্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা বা গাফিলতির কারণে এই ব্যয় বৃদ্ধির মাশুল গুনতে হবে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণকে।
বিলম্বের কারণে ব্যয় বৃদ্ধির প্রাক্কলনের দৃষ্টান্ত এই একই প্রকল্পের অংশের দিকে তাকালেই দেখা যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে মাওনা পর্যন্ত অংশটির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। এই অংশের কাজের জন্য গত বছরের মার্চ মাসে চীনা কোম্পানি এইচআরবিসি আর বাংলাদেশের কোম্পানি ইন্ট্রাকো বিডিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ৩২৯ কোটি টাকায়। দরপত্রের প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগসহ নানা জটিলতার কারণে এই অংশের কাজ এখনো শুরু হয়নি, এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৫ মাস। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে; এবার বাড়তি ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫৬৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ২৪০ কোটি টাকা। বাড়তি এই বিপুল অঙ্কের অর্থ আসবে কোথা থেকে? বলাই বাহুল্য, বাড়তি এ ব্যয়ভার মেটানো হবে গরিব জনগণের করের টাকায়। কিন্তু অহেতুক এই বাড়তি খরচের জন্য দায়ী কে? কাজ শুরু করতে কেন এত বিলম্ব হচ্ছে? এই বিলম্বের দায় কার?
প্রকল্পটির পরিচালক ফিরোজ ইকবাল কাজের ধীরগতির কারণ সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘অর্থসংকটসহ অনেক কিছুই আছে। সবকিছু বলা যায় না।’ আমাদের প্রশ্ন, জনগণের টাকা কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে কেন সবকিছু বলা যাবে না? তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘বড় প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন।’ আমাদের প্রশ্ন, কেন কঠিন? কারণগুলো কী? মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে ৩২৯ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে গিয়ে ৫৬৯ কোটি টাকা হওয়া বাস্তব যুক্তিসংগত কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, এটা কম-বেশি হতে পারে। আমাদের প্রশ্ন, কত বেশি হতে পারে? দুর্নীতি দমন কমিশন কি এখানে কিছু করণীয় আছে বলে অনুভব করে না?
বড় প্রকল্পগুলোর দরপত্রের প্রক্রিয়া, কার্যাদেশ প্রদান, কাজের গতিসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্তভাবে জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.