গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না-বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ

মানুষের চেতনা গঠনের মূলে আছে স্মৃতি। এ জন্য সারা বিশ্বেই দেখা যায়, কোনো সমাজ যে চেতনা সবার মাঝে সঞ্চারণ করতে চায়, তার চিহ্ন ও প্রতীক সাধারণের দৃষ্টিগ্রাহ্য রাখতে তারা সচেষ্ট থাকে। কিন্তু যে চেতনায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা অনেকটা উদাসীন


থেকেছি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বধ্যভূমিগুলোর বেশির ভাগই এখনো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। ইতিহাসের নিদর্শন ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। এবার সরকার ১৭৬টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। দেরিতে হলেও এ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
বধ্যভূমিগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের নৃশংসতা এবং জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধের সাক্ষ্য দিচ্ছে। অথচ দেশের অধিকাংশ বধ্যভূমি এখন যে করুণ অবস্থায় আছে, তা সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা দিতে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই পরের প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এ জায়গাগুলো সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
স্বাধীনতার জন্য এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশের যে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। আত্মোৎসর্গকারী এই শহীদেরা যে চেতনা ধারণ করে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তা শুধু অতীতের বিষয় নয়, যাবতীয় অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তা আজও আমাদের প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের স্মৃতি সব সময়ই সজীব ও প্রাণবন্ত। এই স্মৃতি আমাদের সামনে এগিয়ে চলতে সহায়তা করে। তাই প্রত্যাশা করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে এ জায়গাগুলো গড়ে তোলা হবে এবং সরকারের বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে।

No comments

Powered by Blogger.