অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আমাদের সংবিধানের নির্দেশনা by আবদুল লতিফ সিদ্দিকী

স্পিকার মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে তাই কথা বলার জন্য পথ আরো প্রশস্ত হলো। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করে। কারণ এই সরকার গণতান্ত্রিক। পরমতসহিষ্ণুতা এবং আলোচনার আগ্রহ থাকা গণতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য।


আমাদের সেই ইচ্ছা এবং মানসিকতা আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিভাবে হবে, তা নিয়ে আলোচনায় বসতে বিরোধী দল আগ্রহী নয়। এখানেই তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। তারা আসলে দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। সরকারকে সবই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একদিকে নেতিবাচক মানসিকতার মোকাবিলা করতে হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন চিন্তাও বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে সরকারকে। তাদের কৃতকর্মকে কিভাবে মূল্যায়ন করব। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলকে বিরোধী নয়, তারা সংসদে সংখ্যালঘিষ্ঠ দল। তাদেরও বিশাল ভূমিকা আছে। তবে তাদের জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তারা তো জনমতে বিশ্বাসী নয়। তাদের দৃষ্টি সব অশুভের দিকে। আমরা শুভ চাই, আমরা দেশের কল্যাণ চিন্তা করি এবং বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সংলাপের কথা বলা হচ্ছে, আমরা অবশ্যই চাই সংলাপ হোক।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি। এটা আমাদের সংবিধানের নির্দেশনা। নির্বাচনের আগে সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবে। সেই সময় রাষ্ট্র সরকারবিহীন থাকবে না। রাষ্ট্রপতি তখন সরকারপ্রধানকে বলবেন, পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত যেন সরকার পরিচালনা করেন। তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এ সরকার কিভাবে কাজ করবে, সংবিধানের আলোকে কিভাবে তা গঠন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। আমি মনে করি স্পিকার সাংবিধানিক বিষয়কে আমলে এনেই মধ্যস্থতার কথা বলেছেন।
এখানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের একটা কথা উল্লেখ করতে চাই। আমার কাছে চমৎকার মনে হয়েছে। মনে করি, তার এ বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। আমার মনে হয় তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিএনপি এবং অন্য নির্বাচিত দলগুলো থেকেও প্রতিনিধি নিতে হবে। এখন যেভাবেই এগিয়ে যান না কেন, আপনাদের তো আগে সংসদে আসতে হবে। আপনারা সরকারের কাজের সমালোচনা করুন। সমালোচনা হচ্ছে সমমানের আলোচনা।
সেই আলোচনা থেকে তো দেশ উপকৃত হবে। সংসদের দুয়ার তাদের জন্য সব সময়ই খোলা। তবে আমি মনে করি তাদের সংসদীয় সংস্কৃতি নেই। তাদের কৌশলটা নেতিবাচক। তারা সংসদে আসে সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার জন্য। সেই যে ৯০ দিন পূরণ হওয়ার আগে সংসদে যেতে হবে সেই শর্ত ঠিক রাখার জন্য। তারা তাদের দাবির কথা উপস্থাপন করবে। এটা স্বাভাবিক। সে জন্য তারা সংসদে এবং সংসদের বাইরে রাজপথ দুটো স্থানকেই বেছে নিতে পারে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিরোধী দল রাজপথে আন্দোলন করে; কিন্তু সংসদেও কথা বলে। তারা বাইরে বলছে, এবার সংসদে এসে তাদের কথাগুলো বলুক। আলোচনার মাধ্যমে শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন, অন্য প্রসঙ্গও আলোচনা হতে পারে। যেকোনো সমস্যাই আলোচনা মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.