কমিউনিস্ট-কোটিপতি দোস্তি by আসিফ আহমেদ

বাংলাদেশে যেমন জাতীয় সংসদ, ব্রিটেনে কমন্স সভা এবং ভারতে লোকসভা। চীনের পার্লামেন্টকে ইংরেজিতে বলা হয় ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত এই দেশের আইন পরিষদে নির্বাচিত হতে হলে আয় হতে হবে কম, এমনকি সহায়-সম্পদ একেবারে নেই যাদের তাদেরও কেউ কেউ স্থান পেলে বিস্ময়ের কিছু থাকে না।


কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয় তো গরিবের পার্টি বলেই। বাংলাদেশে এখন বামপন্থি দলগুলোর শক্তি-সামর্থ্য তেমন নেই। তাদের প্রার্থীদের জাতীয় সংসদে জয়ী হয়ে আসা কঠিন। বর্তমান সংসদে সিপিবির কেউ নির্বাচিত হয়নি। আগের একাধিক পার্লামেন্টে তাদের কয়েকজন জয়ী হয়েছিলেন। রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির দু'জন আছেন, যাদের জয়লাভের পেছনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দিলীপ বড়ূয়া মন্ত্রী হয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়। আগে একবার নিজ দলের ব্যানারে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে শোচনীয়ভাবে হেরেছিলেন। বামপন্থি দলগুলোর অভিযোগ, ধনীদের দলগুলোর প্রার্থীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, যার কাছে তাদের হার মানতে হয়। বাংলাদেশের সংসদে এখন ধনবান সংখ্যা অনেক। বলা হয়, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের স্বার্থে সংসদে কথা বলার লোক অনেক। সরকার তাদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না। ভারতেও এমন চিত্র আমরা দেখি। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদেও কোটিপতি ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কথা ভাবা যায় না। চীনের পিপলস কংগ্রেসের সদস্য তিন হাজার। এ সংস্থার বৈঠক বসছে ৫ মার্চ। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতারা এর সদস্য। তাদের সঙ্গে বসছেন অন্তত ৭০ জন, যাদের প্রত্যেকের রয়েছে অঢেল সম্পদ। চীনের ধনবান ব্যক্তিদের তালিকা নিয়মিত প্রকাশ করে এমন একটি সংগঠন জানিয়েছে_ এই ৭০ জনের সম্পদের মোট পরিমাণ ৮ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। চীনের মুদ্রায় যা ৫৬ হাজার ৫৮০ কোটি ইউয়ান। বাংলাদেশের মুদ্রায় ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট মিলিয়ে বরাদ্দ হয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আমরা বলতে পারি, চীনের পার্লামেন্টের ৭০ জন সদস্যের যে সম্পদ তা দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান আকারের ৪টি বাজেট তৈরি করেও যথেষ্ট অর্থ হাতে থেকে যাবে। গত বছরে চীনের কোটিপতি পার্লামেন্ট সদস্যদের সম্পদ বেড়েছে এক হাজার ১৫০ কোটি ডলার। পার্লামেন্টে থেকেও সম্পদ বাড়াতে সে দেশে সমস্যা নেই। ভারতের পার্লামেন্ট বা লোকসভায় ধনীদের ছড়াছড়ি, এমন অভিযোগ অনেকের। বর্তমান লোকসভায় এ ধরনের ৩৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২০০৯ সালে ছিল ২৫ কোটি ডলার, বাংলাদেশের মুদ্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি ডলার। এমনটি হতে পারে যে, তাদের কেউ কেউ কিছু সম্পদ গোপন করেছে। বাংলাদেশেও এমনটি হয়ে থাকে_ ধনবানরা বেনামে সম্পদ রাখে। বাংলাদেশে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করতে হলে সম্পদের পরিমাণ জানাতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। প্রতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদানও বাধ্যতামূলক। নির্বাচন কমিশন এবং রাজস্ব বোর্ডের কাছে প্রদত্ত হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে শাস্তি হওয়ার কথা। রাজস্ব বোর্ডে সম্পদের কথা গোপন রাখা হলেও শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধায় কোনো সংস্থা যথেষ্ট সাহস করে এগিয়ে আসছে না। তবে ভারতের কোটিপতিদের তুলনায় চীনা কোটিপতিদের পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়া ঢের ঢের কঠিন। ভারতে নির্বাচনী এলাকা থেকে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আসতে হয়। অনেক আসনে দেখা যায়, দলীয় প্রভাব এবং ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে তুলনামূলক কম ধনী বা স্বল্পবিত্তের মালিকরাও কোটিপতিদের হারিয়ে দিচ্ছে। চীনের ক্ষেত্রে কাজটি সহজ_ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের মন জয় করতে পারলেই হতো। তারা যাকে বেছে নেবে, পার্লামেন্টে বসা তাদের নিশ্চিত। ধনবানদের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বন্ধন বেশ দৃঢ়ই বলতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.