রঙ্গব্যঙ্গ-ওবামার কাল্পনিক সাক্ষাৎকার by মোস্তফা কামাল

ওসামা নিহত হওয়ায় ওবামা আলোচনায়। বিশ্বব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড়! সবার এক প্রশ্ন, নিরস্ত্র ওসামাকে আটক না করে কেন হত্যা করা হলো? এ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্যেও নানা অসংগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করছি।


রঙ্গব্যঙ্গ : ওসামা নিহত হওয়ার পর আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
ওবামা : ওসামা! প্লিজ, তাকে ওই নামে ডাকবেন না। ওই নামটার সঙ্গে আমার নামের বড় মিল! শেষে ওসামা ওবামাও হয়ে যেতে পারে। আপনি ওকে লাদেন বলুন। তা ছাড়া জঙ্গিপনার সঙ্গে লাদেন নামটা যতটা জুতসই মনে হয়, ওসামার সঙ্গে ততটা জুতসই লাগে না।
রঙ্গব্যঙ্গ : ঠিক আছে, লাদেনই বলব। এবার আপনার প্রতিক্রিয়া বলুন।
ওবামা : বিজয়ের আনন্দে আমি উদ্বেলিত। খুবই ভালো লাগছে। স্বস্তি অনুভব করছি। মনে হচ্ছে, আমার মাথার ওপর থেকে একটা পাহাড় আকৃতির বোঝা নেমে গেছে। এবার হয়তো নির্বাচনে জেতার জন্য বড় কোনো ধাক্কা খেতে হবে না। উহ! আমেরিকানরা যা শুরু করেছিল! নামের কারণে আমাকে মুসলমান বানিয়েই ছাড়বে এ রকম একটা অবস্থা! আমি সার্টিফিকেট দেখিয়েও পার পাচ্ছিলাম না! আমার বাবা মুসলমান। তিনি আদর করে আমার নাম রেখেছিলেন বারাক হোসেন ওবামা। শত হলেও বাবার দেওয়া নাম। এটা কি ফেলা যায়! যে মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন তিনি তো খ্রিস্টান ছিলেন। আমেরিকানরা ভাবছে, বাবা মুসলমান বলে আমি নাকি মুসলমান। আমি মুসলমানদের প্রতি বেশি অনুরক্ত। তাদের ছাড় দেওয়ার মনোবৃত্তি আমার মধ্যে। এটা প্রমাণের জন্যই আসলে লাদেনকে মেরে ফেলার অনুমতি দিয়েছি। এখন আমার পজিশন খুব ভালো। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড এখন আমার হাতে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের!
রঙ্গব্যঙ্গ : সেই আনন্দের সঙ্গে তো মানবাধিকার প্রসঙ্গটিও জড়িত, তাই না?
ওবামা : মানবাধিকার! কার মানবাধিকার! একজন খুনির মানবাধিকার! আপনি জানেন লাদেন কত লোককে হত্যা করেছে? সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে! বিশ্বকে কিভাবে অস্থির করে রেখেছে! আমি অনেক ভেবে দেখলাম, লোকটাকে না মারলে শান্তি আসবে না। একজন লোকই যদি অশান্তির কারণ হয় তাহলে তাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কী?
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনারা আরেকটি দেশকে না জানিয়ে ওই দেশের ভেতরে ঢুকলেন! ওই দেশের সার্বভৌমত্বের কিছু থাকল?
ওবামা : হা হা হা! আমেরিকা ছাড়া আর কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব আছে! আমরা ইচ্ছা করলে সব কিছু করতে পারি! যেকোনো দেশে যখন-তখন ঢুকতে পারি। যখন যাকে খুশি, যেভাবে খুশি শেষ করে দিতে পারি।
রঙ্গব্যঙ্গ : হুম! সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। তাহলে আপনারা মানবাধিকারের কথা কেন বলছেন?
ওবামা : আরে, মানবাধিকার কি আমাদের জন্য নাকি? আমরা যা করি, সেটাই আমাদের অধিকার। আর আপনাদের বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলো নিজেরা যা করে সেটা তাদের অনধিকার। আমরা যা বলব, যেভাবে বলব সেভাবে করতে হবে। বুঝতে পারছেন! মানবাধিকার হচ্ছে আপনাদের মতো ছোট দেশের জন্য। আমাদের জন্য নয়!
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনারা তো আগে থেকেই জানতেন লাদেন পাকিস্তানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। এ সময়টাকে বেছে নিলেন কেন?
ওবামা : আমেরিকানদের চাপে। দেখলেন না, আমি মুসলমান না খ্রিস্টান তা নিয়ে কী শুরু হলো! আমি ভাবলাম, এ সময় এমন একটা কিছু দিতে হবে, যাতে আমেরিকানরা সেটা নিয়েই মাতামাতি করে। আমার ব্যক্তিগত বিষয়টা ঢাকা পড়ে যায়! কী, কেমন দিলাম? খুব ভালো না?
রঙ্গব্যঙ্গ : হুম! আচ্ছা, লাদেন কত বছর ধরে পাকিস্তানে ছিলেন, বলবেন?
ওবামা : আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচ-ছয় বছর ধরে লাদেন পাকিস্তানে ছিল।
রঙ্গব্যঙ্গ : পাকিস্তানকে কি এ বিষয়ে আগে থেকে অবহিত করেছিলেন?
ওবামা : অনেকবার। আমরা নিশ্চিত করে বলার পরও তারা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, লাদেন আফগানিস্তানের কোনো পাহাড়ে লুকিয়ে আছে।
রঙ্গব্যঙ্গ : এ কারণেই আপনারা পাকিস্তানকে না জানিয়ে লাদেনের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন?
ওবামা : একদম ঠিক ধরেছেন। পাকিস্তানকে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। সে কারণেই আমরা তাদের রাডার সিস্টেম বিকল করে দিয়েছি। তাদের আগে থেকে জানালে তারা তা ফাঁস করে দিত। তাতে আমাদের মিশন ব্যর্থ হতো। আসলে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি।
রঙ্গব্যঙ্গ : তার মানে এটা ছিল আপনাদের কিলিং মিশন?
ওবামা : বলতে পারেন। কারণ আমি তো কিলিংয়ের অনুমতি আগেই দিয়েছি। আসলে আমরা তাকে নিয়ে আর কোনো রাজনৈতিক খেলা খেলতে দিতে চাইনি। এ কারণে লাশটাও সাগরে ফেলে দিয়েছি।
রঙ্গব্যঙ্গ : ইতিহাসের কী নিয়তি দেখেন! আপনারাই তাঁকে আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করলেন। তিনিই পরে আপনাদের বিরুদ্ধে চলে গেলেন। একসময় সাদ্দামকে আপনারা ব্যবহার করলেন। সেই সাদ্দামও আপনাদের বিপক্ষে চলে গেলেন! তাই না!
ওবামা : এটাই তো আমেরিকার পলিসি। যাকে যখন প্রয়োজন ব্যবহার করে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাকে ছুড়ে ফেলে। এটা নতুন নাকি! এই যে আমরা, কালোরা আমেরিকায় নিপীড়নের শিকার! এখন আবার আমেরিকার প্রয়োজনেই আমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ক্ষমতায় বসিয়ে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে।
রঙ্গব্যঙ্গ : এবার শেষ প্রশ্ন, আপনারা তো লাদেনকে মেরে পাকিস্তানকে বিপদে ফেলে দিলেন!
ওবামা : পাকিস্তান তো বিপদে ছিলই। নতুন আবার বিপদ কী! ওদের জঙ্গিরাই ওদের শেষ করবে। ওরা আগুন নিয়ে খেলছে! ওরা নিজেরাই নিজেদের আগুনে পুড়বে।
রঙ্গব্যঙ্গ : একসময় বলা হতো, আমেরিকা পাকিস্তানের ন্যাচারাল বন্ধু। এখন দুই দেশের সম্পর্ক মূল্যায়ন করুন।
ওবামা : দুই দেশের সম্পর্কে অবিশ্বাসের একটা প্রাচীর তৈরি হয়েছে। এই প্রাচীর সহসা ভাঙার নয়। বরং আরো পুরু হতে পারে। এটাও পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
রঙ্গব্যঙ্গ : এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের করণীয় কী?
ওবামা : আসলে পাকিস্তান কঠিন চিপার মধ্যে পড়েছে। একদিকে ভাবমূর্তি সংকট অন্যদিকে জঙ্গি সংকট। দুই সংকটের চাপে পাকিস্তানের চ্যাপ্টা হওয়ার দশা। এই চিপা থেকে কিভাবে বের হবে তা ঠিক বুঝতে পারছি না। আমার মাথায় ধরছে না।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.