আশাবাদী কথা নয়, মানুষ বিদ্যুৎ চায়-বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি

গরম না পড়তেই শহর-গ্রামনির্বিশেষে (শুধু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ছাড়া) দেশজুড়ে যে হারে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়েছে, তাতে আশঙ্কা জাগছে সামনের দীর্ঘ গ্রীষ্ম মৌসুমজুড়ে সরকার কীভাবে বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি সামাল দেবে।


শুক্রবারের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চলমান বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির চিত্র। এ ছাড়া চতুর্থ পাতায়ও পৃথক এক প্রতিবেদনে পরিবেশিত হয়েছে বগুড়া, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরেও ব্যাপক লোডশেডিংয়ের খবর। বৃহস্পতিবার সারা দেশেই লোডশেডিং ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ প্রথম আলোর কার্যালয়ে ফোন করে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন এবং এত ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চান।
কারণ নতুন কিছু নয়, বিশেষ কোনো কারিগরি বিপর্যয়ও ঘটেনি; যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হঠাৎ করে ব্যাপক মাত্রায় ব্যাহত হতে পারে। আসলে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম। শীতকালে ঘাটতিটা সহনীয় পর্যায় ছাড়িয়ে যায়নি; কিন্তু গরম পড়তে শুরু করায় সংকট বাড়তে শুরু করেছে। শুধু বৈদ্যুতিক পাখা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের ব্যবহার নয়, কৃষিক্ষেত্রে সেচের কাজেও বিদ্যুতের প্রয়োজন সামনে বাড়বে। তাই বৃহস্পতিবারের লোডশেডিংয়ের মাত্রা আসলে আসন্ন গরমকালের বিদ্যুৎ-সংকটের একটা আগামী সংকেত হিসেবে অনুমান করা যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়লে পরিস্থিতি যে গুরুতর হবে তাতে সন্দেহ নেই।
বিদ্যুৎ-সংকটের সমাধান করা সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পরও এ সরকার বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে অনেক আশাবাদী কথাবার্তা বলেছে। অনেক নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা বেড়েছেও বটে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ, বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ছে না। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, আরও বাড়ানো হবে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। জনসাধারণের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর খুব বড় প্রতিবাদ হয়েছে এমন নয়। বেশি দাম দিয়েও মানুষ বিদ্যুৎ কিনতে রাজি আছে, কারণ বিদ্যুৎ ছাড়া এই যুগে চলা প্রায় অসম্ভব। শিল্প উৎপাদন, কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য—কোনো কিছুই বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। তাই সরকার যখন বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, তখন গ্রাহকদের বিদ্যুৎ পাওয়া নিশ্চিত করা সরকারের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা সরকারের উপলব্ধি করা উচিত।
অতীতের সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায়নি, কিন্তু চাহিদা বেড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ-সংকট পুঞ্জীভূত হয়েছে, সেই পুঞ্জীভূত সংকট অল্প সময়ে কাটানো সম্ভব নয়—বর্তমান সরকারের এমন ব্যাখ্যায় জনগণ সন্তুষ্ট হবে না। সুতরাং সরকারকে খুব সুচিন্তিতভাবে এবং অতি গুরুত্বের সঙ্গে বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বাত্মক তৎপরতা চালাতে হবে। আশাবাদী কথায় কোনো কাজ হবে না, জনগণ বাস্তবে বিদ্যুৎ পেতে চায়, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম।

No comments

Powered by Blogger.