লাইসেন্স প্রদানে চাই স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা-মুঠোফোনে তৃতীয় প্রজন্ম

প্রযুক্তির সঙ্গে সব সময়ই ‘নতুন’ বিষয়টি জুড়ে থাকে। আজ যে প্রযুক্তি নতুন হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে, দুই দিন পরই তা পুরোনো। আমাদের দেশের মুঠোফোন প্রযুুক্তিও তেমনি নতুনের দিকে যাচ্ছে। দ্বিতীয় প্রজন্ম বা টু-জি নামে পরিচিত যে প্রযুক্তি দিয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বলা যায় বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে মুঠোফোন, সেখানে আসছে নতুন বা আরও


উন্নত প্রযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে না পারলে সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়বে।
উন্নত দুনিয়ায় অনেক আগেই এই থ্রি-জি চালু হয়েছে। এখন ফোর-জি প্রযুক্তির দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে। ভারতে বছর দুয়েক আগে থ্রি-জি প্রযুক্তি চালু হলেও বাংলাদেশে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতেই যথেষ্ট বিলম্ব হয়ে গেছে। অথচ আলোচনা চলছে সেই ২০০৮ সাল থেকেই। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে এসে সরকার থ্রি-জি প্রযুক্তি চালুর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতেও বেশ সময় লাগবে। এখন দ্রুত থ্রি-জি প্রযুক্তি চালুর দিকেই মনোযোগী হতে হবে সরকারকে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুঠোফোনের এই তৃতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স দেওয়া হবে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে। নিলামের বিষয়টি স্বচ্ছ, বিতর্ক ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারলে এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা যাবে। শুরু থেকেই কাজটি করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে । থ্রি-জি লাইসেন্স নিয়ে ভারতে বড় ধরনের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা উচিত।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসের মধ্যে থ্রি-জি লাইসেন্স চালু এবং পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটককে এই সেবা চালুর অনুমতি দেওয়া হবে। শুরুতেই টেলিটককে এই লাইসেন্স দেওয়া এবং এর মাধ্যমে থ্রি-জি সেবা চালুর সিদ্ধান্তটিকে সুবিবেচনাপ্রসূত বলা যাবে না। সেবার মান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে দেশের মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে টেলিটক। সরকার নিজের এই প্রতিষ্ঠানটিকে কিছু বাড়তি সুযোগ দিতেই পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে থ্রি-জি চালু করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল এবং এর ফল ভালো হয়নি। বড় কথা, ব্যবসার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি গ্রাহকসেবার মান ধরে রাখার জন্য। আর এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সবার জন্য সমান সুযোগ। কেউ বাড়তি সুবিধা পেলে সেটাকে প্রতিযোগিতা বলা যায় না। টু-জি লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে যে বিবেচনায় লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানেও এই ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ নীতি উপেক্ষিত হয়েছে।
আমরা আশা করব, এই বিষয়গুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে এবং স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে থ্রি-জি লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। দেশ যত দ্রুত থ্রি-জি সেবা পাওয়ার সুযোগ পায়, ততই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.