কালের আয়নায়-সরকারের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা আস্থার সংকট by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতাগুলোর তিলকে তাল করে ঢোল বাজছে চারদিক থেকে। কিন্তু তার বড় সাফল্যগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরে আস্থার সংকট থেকে এই সরকারকে বাঁচানোর কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না।


বর্তমান তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, দক্ষতা এবং সাফল্যটা কী কেউ তা আমাকে বোঝাতে পারবেন কি? যদি কেউ বোঝাতে পারেন তাহলে তাকে শিরোপা দেব। এখনও সময় আছে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা শক্ত হাতে রদবদল করুন



গত মাসে লন্ডন-সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার পথে মাত্র দেড় দিন ঢাকায় অবস্থান করেছি। ১০ ফেব্রুয়ারি দশ ঘণ্টা এবং ২০ ফেব্রুয়ারি পুরো একটা দিন। তাও কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারিনি। মাঝরাতে ঢাকার মাটিতে পা দিয়েছি, সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি, আমার ৫০ বছরের অধিককালের বন্ধু ফয়েজ আহ্মদ আর নেই। তখনই ছুটেছি ভাষা শহীদ মিনারে তার মরদেহ একবার শেষ দেখার জন্য। শুনলাম, পরের দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী যাবেন শহীদ মিনারে। সুতরাং নিরাপত্তা বেষ্টনীতে শহীদ মিনার বেষ্টিত। সেখানে মরদেহ নেওয়া হবে না।
শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। হায় রে শহীদ মিনার। তুমি কত সংগ্রাম, কত সাধনার পাদপীঠ, তুমিও আজ সরকারি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বন্দি। একুশের কণ্ঠে এখনও গান আছে, সুর আছে, প্রাণ নেই। ছুটলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সেখানে মধ্যরাতের অশ্বারোহীর মরদেহ রাখা হবে। সেখানে গিয়েও দেখি, মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি অফিসে। সেই সকাল ১০টা থেকে ফয়েজ আহ্মদের মরদেহের পেছনে ছুটেছি। ঢাকার রাজপথে যান-জঙ্গল ভেদ করে এক পা এগোয় কার সাধ্য! তবু এক মন্ত্রীর গাড়িতে চড়েছিলাম বলে রাস্তায় সেই অনতিক্রমণীয় যান ব্যারিকেড অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত সিপিবি অফিসে পেঁৗছেছি এবং বন্ধুর মরদেহ শেষবারের মতো দেখতে পেয়েছি।
সন্ধ্যাবেলাতেই এয়ারপোর্টে ছুটেছি দুবাইগামী ফ্লাইট ধরার জন্য। দুবাই থেকে ফিরে আসব লন্ডনে। তার দু'দিন পরই আবার ছুটব জার্মানির মিউনিখে। এই ছোটাছুটির মধ্যে মাত্র দেড় দিনের ঢাকা অবস্থানের সময় কি দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি? না, পারিনি। মনে মনে বছরখানেক আগে দেখা (তখন মাসখানেক ঢাকায় ছিলাম) দেশের অবস্থার কথা ভেবেছি। যানজটের যে কিছুমাত্র উন্নতি হয়নি, তা একদিনের অভিজ্ঞতাতেই বুঝেছি। বিদ্যুৎ সংকট কিছুটা ঘুচেছে। যে বাড়িতে ছিলাম, তাতে একবার মাত্র লোডশেডিং হয়েছে। বন্ধুরা বললেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বটে, তবে শীতকাল চলে গেলে বোঝা যাবে, এই উন্নতি কেবল শীত মৌসুমের কারণে কি-না! গরমকাল এলেই তা বোঝা যাবে।
দেশে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হ্রাস পায়নি। কিন্তু খাদ্য সংকট নেই। গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষ অনেকটাই খুশি। কিন্তু শহরের নিম্ন আয়ের নিম্নমধ্যবিত্ত খুশি নয়। দ্রব্যমূল্য, যানজট, বিদ্যুৎ সংকট, সব রকম নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি নানা সমস্যায় তারা পিষ্ট। মৌলবাদী হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস অনেকটা কমেছে। কিন্তু সামাজিক সন্ত্রাস ও ব্যক্তিগত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে বই কমেনি। আগে দুর্নীতি ছিল মূলত হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক। এখন অসংখ্য ছোট ছোট হাওয়া ভবন গড়ে উঠেছে। সমাজের উঁচু-নিচু সর্বস্তরে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিরাজমান।
এটা এবারের জন্য আমার বার্ডস আইভিউ। মাত্র দেড় দিনে এর বেশি পর্যবেক্ষণ আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য (দাম নয়) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই সরকারের সাফল্য লক্ষণীয়। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস (ছাত্র সন্ত্রাসসহ) দমনে তা মোটেই নয়। আমার শ্রদ্ধেয় মোহিত ভাই অর্থমন্ত্রী এবং অনুজপ্রতিম বন্ধু আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোচন ও উন্নয়নের একটা অবকাঠামো গড়ে উঠছে না। বিশ্বের সর্বত্র যখন ডলারের দাম নামছে, বাংলাদেশে তখন বাড়ছে। ব্যাংকে হার্ড কারেন্সির রিজার্ভ অবিশ্বাস্য হারে কমছে, মুদ্রার তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এত সব সত্ত্বেও ঢাকা বিমানবন্দরে কিছুক্ষণ অবস্থানের সময় এক অরাজনৈতিক সহযাত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, দেশ কেমন চলছে? তিনি বললেন, ভালো চলছে বলব না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আমলের তুলনায় অনেক ভালো চলছে। আবারও প্রশ্ন করেছি, তাহলে বিএনপির ভাঙা শিবিরে ধাই ধাই করে জনতার ভিড় বাড়ছে কেন আর সরকারের জনপ্রিয়তা এত দ্রুত কমছে কেন?
সহযাত্রী সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন, 'এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার অভাব। অনেক ভালো কাজ করেও সরকার জনগণের মধ্যে তাদের সম্পর্কে আস্থা সৃষ্টি করতে পারছে না। জনগণ মনে করে, দেশের জন্য ভালো কাজ করার আন্তরিক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সেই ভালো কাজ করার ব্যাপারে এই সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে যোগ্যতার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির অতীতের রেকর্ড কেবল খারাপ কাজে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও জনগণ ভাবে, বিএনপির সাবেক মন্ত্রীরা তুলনামূলকভাবে যোগ্য। তারা চাইলে ভালো কাজে দক্ষতা দেখাতে পারবেন। বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের এই আস্থার অভাবই এই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা।'
লন্ডনে ফিরে এসে ঢাকার দু'জন প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হচ্ছিল। দু'জনেই আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী। একজন তো বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। দু'জনেই ভগ্নকণ্ঠে বললেন, গাফ্ফার, আমাদের আশঙ্কা, আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের ভাগ্যবরণ করবে। জিজ্ঞেস করেছি, তাহলে কী হবে? তারা বলেছেন, কী হবে, তা খালেদা জিয়ার উক্তি শুনে বুঝতে পারছেন না? তিনি বলেছেন, 'আমরা আর প্রতিশোধের রাজনীতি করব না।' এর নির্গলিতার্থ কী তা বুঝতে পারছেন? এর অর্থ, আমরা এবার ক্ষমতায় এলে এমন কাজ করব, যার ফলে তাকে আর প্রতিশোধ বলে অভিযোগ করার লোকও থাকবে না।
বলেছি, আপনারাই বলছেন, হাসিনা সরকার অনেক ব্যাপারে অনেক ব্যর্থতা সত্ত্বেও এতসব ভালো কাজ করেছে, অতীতে বিএনপি-জামায়াত সরকার যা করতে পারেনি। দেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বর্তমানের অনেক বড় বড় অমীমাংসিত সমস্যারও সমাধান হবে বলে আমারও বিশ্বাস। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে এলে এবং তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশের ভাগ্যে দেখা দেবে সর্বকালের সবচেয়ে বড় দুঃসময়। এসব জানা থাকা সত্ত্বেও বাংলার মানুষ আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেবে বলে আপনারা ভাবছেন?
দু'জন সাংবাদিক বন্ধুই বলেছেন, দেবে কি দেবে না, তা কি এখন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন না? বিভিন্ন পৌরসভার নির্বাচন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচনে আপনি কী দেখছেন? আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার কোনো লক্ষণ দেখছেন কি? আওয়ামী লীগ সরকার অনেক ভালো কাজ করেও জনগণের মধ্যে এই আস্থা সৃষ্টি করতে পারছে না যে, দেশবাসীর মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানে এই সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী ও উপদেষ্টার কোনো যোগ্যতা এবং আগ্রহ আছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই এখন দুর্নীতির অভিযোগও যুক্ত হয়েছে। শেয়ার মার্কেটের ধসের কারণ সম্পর্কে গুজবে গুজবে এখন বাজার সয়লাব।
দুই প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধুর মধ্যে একজন আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, চার্চিলকে বলা হয় সেভিয়ার অব ব্রিটেন। নাৎসি আক্রমণের মুখে ব্রিটেনের চরম দুর্দিনে অসম সাহসে তিনি দেশটির নিমজ্জিত প্রায় নৌকার হাল ধরেছিলেন। ছয় বছর অত্যন্ত সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে এই হাল ধরে রেখেছেন এবং ব্রিটেনকে যুদ্ধে জয়ী করার অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। এই যুদ্ধজয়ের বছরেই (১৯৪৫) তিনি ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন দিয়েছিলেন। সারাবিশ্বের মানুষ ধারণা করেছিল, কৃতজ্ঞ ব্রিটেনবাসী চার্চিলকেই আবার ভোট দেবে এবং তাকে ক্ষমতায় রাখবে।
কিন্তু ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তা রাখেনি। বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়ে তারা তাদের ত্রাণকর্তা চার্চিলকে ভোট দেয়নি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির নেতা ক্লিমেন্ট এটলিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ১৯৪৫ সালের ব্রিটিশ নির্বাচনের এই বিস্ময়কর ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একাধিক নিরপেক্ষ বিশ্লেষক বলেছেন, যুদ্ধজয়ে চার্চিলের দক্ষতায় ব্রিটেনের মানুষের আস্থা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন ও ওয়েলফেয়ার স্টেট গঠন সম্পর্কে তার আগ্রহ এবং দক্ষতা সম্পর্কে ব্রিটিশ জনগণের মনে আস্থা ছিল না। এই আস্থার সংকট চার্চিল কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ফলে নির্বাচনে তার এবং তার দলের এই পরাজয়।
বাংলাদেশের হাসিনা সরকার সম্পর্কেও এই বিশ্লেষণ প্রযোজ্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার সাহসী সংগ্রামে জনগণের মনে এই দৃঢ় আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, তিনি ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো নেতা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কমিটেড, কারেজিয়াস ও লড়াকু নন। অনেক বিদ্যাবুদ্ধি ও পাণ্ডিত্য থাকা সত্ত্বেও ড. কামাল হোসেন, ডা. বি চৌধুরী, ফেরদৌস কোরেশী, কর্নেল (অব.) অলি এমনকি নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসও জনগণের মধ্যে এই আস্থা তৈরি করতে পারেননি। নিজেদের জন্য কোনো ক্রেডিবিলিটিও অর্জন করতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনেও জনগণ ছিল অতিষ্ঠ। শেখ হাসিনাই তখন দেশের সব মানুষের সামনে একমাত্র সেভিয়ার হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নির্বাচনী যুদ্ধ দুটিতেই জয়লাভ করেছেন।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সম্পর্কে অনেক পর্যবেক্ষকেরই একটি পর্যবেক্ষণ এই যে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের যুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদানের সাহস, শক্তি ও দক্ষতা সম্পর্কে দেশের মানুষ সন্দেহ পোষণ করে না। কিন্তু এই যুদ্ধে জয়ের পরই স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা ও কার্যকর করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ দক্ষতা দেখাতে পারে না এবং দক্ষতা দেখাতে পারবে বলেও দেশবাসীর মনে আস্থা সৃষ্টিতে সক্ষম হয় না। বরং উল্টো ধারণা সৃষ্টি করে। বর্তমানেও তাই ঘটেছে। ২০০৮ সালের আন্দোলন ও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সেই লব্ধ সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য সামনে আরও যে ভয়াবহ সংগ্রাম এবং পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তা উপলব্ধি করতে পারেননি, সম্ভবত অনুমানও করতে পারেননি।
ফলে এই বিরাট বিশাল নির্বাচন জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এটাকে পার্সোনাল ক্যারিশমার জয় ভেবে নিয়ে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা নিয়োগের মানদণ্ড না করে কেবল আনুগত্য ও চাটুকারিতাকে মানদণ্ড করায় একদল মন্ত্রীর অযোগ্যতা ও অনভিজ্ঞতাই আজ গোটা মন্ত্রিসভার ভাবমূর্তিকে গ্রাস করে ফেলেছে এবং কয়েকটি ভাইটাল সেক্টরে এই অযোগ্য মন্ত্রীদের ব্যর্থতাই আজ গোটা সরকারের সামগ্রিক সাফল্যকে জনগণের দৃষ্টির আড়াল করে ফেলেছে। সরকার দেশের অনেক বড় বড় সংকটের মোকাবেলা করছে। কিন্তু এই আস্থার সংকটের মোকাবেলা করতে পারছে না।
এটা যে ঘটবে, সে সম্পর্কে আমার মতো নগণ্য সাংবাদিকও মন্ত্রিসভা গঠনের সূচনাতেই প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলাম। তিনি তাতে কান দেওয়া প্রয়োজনবোধ করেননি। এখন তাই ১৯৪৫ সালের গোলিয়াথ চার্চিলের মতো ২০১২ সালে শেখ হাসিনা লিলিপুটদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জ থেকে বাঁচার জন্য তিনি নাকি গণভবনে দেশের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবীদের এক প্রীতিবিনিময় বৈঠকে ডেকেছেন। মহাঐক্যজোটের কথাও তার মনে পড়েছে। খুবই ভালো কথা। কিন্তু কারও সুপরামর্শে তিনি কান দেবেন কি?
দুঃখের কথা, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতাগুলোর তিলকে তাল করে ঢোল বাজছে চারদিক থেকে। কিন্তু তার বড় সাফল্যগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরে আস্থার সংকট থেকে এই সরকারকে বাঁচানোর কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না। বর্তমান তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, দক্ষতা এবং সাফল্যটা কী কেউ তা আমাকে বোঝাতে পারবেন কি? যদি কেউ বোঝাতে পারেন তাহলে তাকে শিরোপা দেব। এখনও সময় আছে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা শক্ত হাতে রদবদল করুন। যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে টানুন। আওয়ামী লীগ সংগঠনকে অযোগ্য ও ইমপোটেন্ট কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত করুন। অন্যান্য সংকট রেখে জনগণের আস্থার সংকটের মোকাবেলা আগে করুন।
লন্ডন, শুক্রবার, ২ মার্চ ২০১২

No comments

Powered by Blogger.