গার্মেন্ট শিল্প-আইন মেনেও মুনাফা সম্ভব

অনিয়ম আর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েও দিব্যি চলছে আমাদের দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত। ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের কাছে শিল্প ও শ্রম আইন কোনো বিষয় নয়। যে শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে তাদের মুনাফা আসে, সেই শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা দেওয়ার ব্যাপারে তাদের অনীহা স্বাভাবিক ঘটনার মতো। শ্রমিকের নিরাপত্তার ব্যাপারেও রয়েছে তাদের অবহেলা।


শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও উৎপাদনের পরিবেশ যথাযথ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেখানে কিছুদিন পরপর মানুষ মারা যায় মালিকপক্ষের অবহেলার কিংবা অব্যবস্থাপনার কারণে। আগুন লেগে কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হলে সাময়িক আফসোস করার মাধ্যমেই যেন মালিকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। শ্রমিক অসন্তোষ তৈরির আশঙ্কায় কিছু প্রতিশ্রুতি কিংবা কোথাও কোথাও কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। এরপর 'যাহা বাহান্ন তাহা তিপান্ন'। আইনানুগ নিরাপত্তা বিধানের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্যই শুধু নয়, উৎপাদন-সহায়ক শক্তি হিসেবে ট্রেড ইউনিয়ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গার্মেন্ট শিল্পে তার কোনো সুযোগ নেই। আর এ কারণেই সেখানে আইনি সুবিধা মাতৃত্বকালীন ছুটিও ভোগ করার সুযোগ পায় না নারী শ্রমিকেরা। উল্টো চিত্র দেখা যায় মালিকদের ক্ষেত্রে। তাঁরা নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে আছে গোড়া থেকেই। সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মতো বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী তাঁরা। এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা আইন অমান্য করার মতো কাজটিও সম্পন্ন করতে পারেন অনায়াসে। যে কারণে তাঁদের অবহেলা কিংবা আইন অমান্য করায় শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ার পরও কোনো শাস্তি পেতে হয় না। সরকারের কাছ থেকে তাঁরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সুবিধাদি আদায় করে নিচ্ছেন। সরকার প্রকাশ্যে শ্রমিকদের নিয়মানুযায়ী সুবিধাদি এবং অধিকার আদায়ের ব্যাপারে বক্তব্য দিলেও তার কোনো প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না। শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তই সরকার কার্যকর করতে পারে না। যখনই গার্মেন্ট শিল্পের অনিয়ম নিয়ে কিছু বলা হয়, তখনই একটি অস্ত্র সামনে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এ খাতে লাখ লাখ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে, এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বড় একটি অঙ্ক আসছে। সুতরাং এঁরা যতই অনাচার করুন না কেন তা নিয়ে কিছু লেখা যাবে না। অথচ এ খাতকে চালু রাখার জন্য সরকারকে কর ছাড় থেকে শুরু করে নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে হচ্ছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান এই খাতকে আইনের আওতায় এনে চালানো গেলে কোনোভাবেই অলাভজনক হবে না। কারণ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা মানবাধিকার থেকে শুরু করে প্রচলিত প্রতিটি আইনই মেনে চলে থাকে। তাদের সংখ্যা অনুল্লেখযোগ্য হলেও তারাও ব্যবসায় মুনাফা করে চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থান উল্লেখ করার মতো। প্রমাণ হয় অতি মুনাফা করার প্রয়োজনেই আসলে তৈরি পোশাকশিল্পে আইন অমান্য করার প্রতিযোগিতা চলছে। এই অশুভ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের স্বার্থের কথাও ভাবতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.