সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চাই সমন্বিত ও সর্বাত্মক অভিযান-মুম্বাইয়ে আবার বোমা হামলা

বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে বোমা হামলার ঘটনাটি তিন বছর আগে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় সন্ত্রাসীরা কমান্ডো কায়দায় পাঁচতারা হোটেল ও রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ১৬৬ জনকে হত্যা করেছিল।

এবারের হামলায় ১৭ জন নিহত ও ১৩১ জন আহত হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম এ ঘটনাকে সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নয়াদিল্লি, কলকাতা, আহমেদাবাদ চেন্নাইসহ বিভিন্ন শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে উপর্যুপরি এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং তীব্র ভাষায় এর নিন্দা জানাই।
হামলার ঘটনাটি তখনই ঘটল, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত মাসে সচিব পর্যায়ে বৈঠকের পর চলতি মাসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ১৯ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও ভারত সফরে আসছেন। সন্ত্রাসীরা কেন এই সময়টিকে বেছে নিল? কেন তারা মুম্বাইকেই বারবার হামলার লক্ষ্যবস্তু করছে? কেউ এই সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার না করলেও ভারতের জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দিকেই সন্দেহের তীর ছুড়ছে গোয়েন্দারা। আর ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন হলো পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সহযোগী। সে ক্ষেত্রে দুই হামলার মধ্যে যোগসূত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়। ২০০৮ সালে যারা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র বেঁচে থাকা আজমল আমির কাসাব বর্তমানে কারাগারে আছেন। ভারতের আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। কাসাব লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। সন্ত্রাসীরা হামলার জন্য এমন দিনটিই বেছে নিয়েছে, যেদিন কাসাবের জন্মদিন।
কাসাব অপরাধী, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর চেয়ে বড় অপরাধী হলো যারা এই উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে, যারা কখনো ধর্মের নামে, কখনো জনগোষ্ঠীর নামে এই তরুণদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তা যে হয়নি, মুম্বাইয়ের ঘটনাই তার প্রমাণ। কয়েক বছর আগে এই জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশকেও রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছিল। এখনো যে তারা নিষ্ক্রিয়, তা বলা যাবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই জঙ্গিগোষ্ঠী কমবেশি তৎপর রয়েছে এবং সুযোগ পেলেই তারা মানুষ হত্যা করছে। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে না পারলে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা সুদূরপরাহতই থাকবে। অতএব এদের মূলোৎপাটন করতে প্রয়োজন সমন্বিত ও সর্বাত্মক অভিযান। এর পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে রাজনৈতিক স্থিতি ও অর্থনৈতিক সমতা, যাতে কোনো অঞ্চল বা ধর্মের মানুষের ক্ষোভ ও বঞ্চনাকে পুঁজি করে সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি না গাড়তে পারে।

No comments

Powered by Blogger.