নির্মাণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করুন-ইটের ঘায়ে যুবকের মৃত্যু

মানুষের জীবন কত তুচ্ছ। তার জীবনের কোনো মূল্য নেই। নিরাপত্তা নেই। না হলে তেজগাঁও কলেজের ছাত্র হাবিবুর রহমান শনিবার পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে চিকি ৎ সাধীন মাকে দেখে ফেরার পথে লাশ হয়ে যাবেন কেন? হাসপাতালের পাশেই সাগুফতা কোম্পানির নির্মাণাধীন ১৮ তলা ভবন থেকে পড়া একটি ইট তাঁর জীবন কেড়ে নিল।

ভবনের ১১ ও ১২ তলায় কাজ হচ্ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাগুফতা ভবনটির নির্মাণকাজ চললেও নিরাপত্তা-জাল ছিল না। এ কারণে দুর্ঘটনার শিকার হন ওই যুবক। কেবল সাগুফতা নয়, ঢাকা মহানগরে এ রকম অসংখ্য ভবনের নির্মাণকাজ চলছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই। সে ক্ষেত্রে এই মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা বলে সান্ত্বনা খোঁজার সুযোগ নেই। আর দুর্ঘটনা হলেও ইচ্ছাকৃত। দুর্ঘটনার পর পুলিশ সাগুফতা ভবনের কয়েকজন কর্মচারীকে আটক করেছে। দুর্ঘটনার ব্যাপারে কর্মচারীদের দায় আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দায় নির্মাণপ্রতিষ্ঠানটির। এক পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে যত শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা যান, তার বেশির ভাগই নির্মাণশ্রমিক। এই দায়িত্বহীনতার জবাব কী?
ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে কিছু আইনকানুন আছে এবং নির্মাণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তা মানতে হয়। আর নির্মাণকাজটি জনবহুল এলাকায় হলে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয়। না হলে সামান্য ভুলে মস্ত বড় ক্ষতি হতে পারে। সমস্যা হলো, ক্ষমতাধর নির্মাতারা এসবের ধার ধারেন না। রাস্তাটাও তাঁদের সম্পত্তি ভাবেন। না হলে ফুটপাত বন্ধ করে, পথচারীদের যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি করে তাঁরা এসব নির্মাণকাজ করতে পারতেন না।
দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহি নেই। আইনের প্রয়োগ নেই। থাকলে ইটের ঘায়ে সম্ভাবনাময় একটি জীবনের এই করুণ পরিসমাপ্তি হতো না। মিরপুরে বাসের ধাক্কায় মারা পড়তেন না তরুণ সাংবাদিক বেলাল হোসেন।
আমরা এসব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। কেননা আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নজরদারিই পারে বেআইনি কাজ বন্ধ করতে। পান্থপথের দুর্ঘটনায় যে যুবক মারা গেছেন, তাঁকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা হাবিবুর ও বেলালের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা ও সহমর্মিতা।

No comments

Powered by Blogger.