জবরদস্তি নয়, চাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি-পার্বত্য চট্টগ্রামে অবরোধ

সংবিধান সংশোধনীর উত্তাপ রাজধানী ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই শুভ ইঙ্গিত দেয় না। ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের আদি সংবিধানে বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো জাতিসত্তার স্বীকৃতি ছিল না। সে ক্ষেত্রে এবারের সংশোধনীতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার যথাযথ স্বীকৃতি থাকবে—এমনটিই প্রত্যাশা ছিল সবার।

কিন্তু সংশোধিত সংবিধানের মূলনীতিতে একক জাতিসত্তাই বহাল রাখা রয়েছে। তবে ২৩ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
পাহাড়িদের অন্যতম সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (ইউপিডিএফ) সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাকে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় বুধবার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অধিকার যেকোনো নাগরিক ও সংগঠনের আছে। কিন্তু বুধবারের কর্মসূচিটি শান্তিপূর্ণ থাকেনি। কয়েকটি স্থানে ইউপিডিএফের সমর্থকেরা মারধর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আবার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার নামে পুলিশ ইউপিডিএফের কয়েকজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
জাতীয় জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফসহ সব আদিবাসী সংগঠনই সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। মূল সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার উল্লেখই ছিল না, সংশোধিত সংবিধানে যেটুকু স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা তাদের আন্দোলনের ফসল বলেই মনে করি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর মনে রাখা প্রয়োজন, রাষ্ট্রে দুর্বল ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ঐক্যই বড় শক্তি। দুর্ভাগ্যজনক যে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐক্যে ফাটল ধরে এবং তা এখন বৈরিতায় রূপ নিয়েছে। সেখানে প্রায়ই দুই পাহাড়ি সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতি যে অধিকারবঞ্চিত পাহাড়িদের শান্তি ও উন্নয়নের অন্তরায়, সেই সত্যটিও তাদের বুঝতে হবে।
আমরা সব নাগরিক তথা জনগোষ্ঠীর ন্যায়সংগত আন্দোলনকে সমর্থন করি। তবে আন্দোলন হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। কর্মসূচির প্রতি যদি জনগণের সমর্থন থাকে তাহলে জবরদস্তিরও প্রয়োজন হয় না।

No comments

Powered by Blogger.