নবদম্পতিসহ নিখোঁজ ১৩ by সোনিয়া হাবিব লাবনী

হাতের মেহেদির রং না মুছতেই শেষ হয়ে গেল সব। মুছে গেল জীবনের রং। শেষ হয়ে গেল একটি পরিবারও। শান্তা ও কামাল। গত শনিবারই তাঁদের বিয়ে হয়েছে। শরীয়তপুর-১ লঞ্চে করে বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন শান্তা। সঙ্গে স্বামী কামাল, দেবর ফারুক, ননদ মিনারা ও মিনারার দুই মেয়ে।

সব মিলে ১৭ জনের একটি দল বিয়ে-উৎসবের আনন্দে ভাসতে ভাসতে যাচ্ছে। সোমবার রাতে তাদের সব আনন্দই ভেসে গেল মেঘনায়, চোখের পলকে।
১৭ জনের মধ্যে মিনারার এক মেয়ে সাত মাসের লামিয়া বেঁচে যায় খালা রিনার বুদ্ধিমত্তার জোরে। রিনা নিজে লঞ্চ থেকে বের হতে পেরেছিলেন। তখনো তাঁর কোলে শিশু লামিয়া। কিন্তু ভরা মেঘনায় একটি শিশুকে হাতে নিয়ে সাঁতরানো সম্ভব নয়। পাশেই ভাসছিল মরিচের বস্তার সারি। এর একটিতে শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে দুজনেই ভাসতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত অন্য একটি লঞ্চের লোকজন এসে দুজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।
এই পরিবারের ১৭ জনের মধ্যে আরো দুজন বেঁচে গেছেন। তাঁরা হলেন বর কামালের ভাতিজা লিটু ও খালাতো ভাই শাহাদাত। বাকি ১৩ জনের মধ্যে দুজন পারভেজ (১২) ও রুবেলের (২৩) লাশ পাওয়া গেছে। সন্তান পারভেজসহ পরিবারের এতগুলো সদস্যকে এক রাতে হারিয়ে পারুল বেগম গতকাল মেঘনার তীরে পাগলের মতো আচরণ করছিলেন। হাজারো মানুষের ভিড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন স্বজনদের। এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন আর যাকে পাচ্ছেন তাকেই ধরে বলছেন- 'জীবিত না হোক লাশ হলেও ফিরিয়ে দেন।' পারুল বেগম আক্ষেপ করে কালের কণ্ঠের এ প্রতিনিধিকে বলেন, 'সরকার লঞ্চ বন্ধ করে না দিলে আমাদের এ সর্বনাশ হতো না। সোমবারেই চলে যেতাম।'
জানা যায়, শান্তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার গ্রামে। কামালদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া গ্রামে।

No comments

Powered by Blogger.