সহজিয়া কড়চা-বুদ্ধিভান্ডারি ও ভ্রাম্যমাণ বুদ্ধিদাতাদের পাঁচালি by সৈয়দ আবুল মকসুদ

রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। তার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। ভালোমতো চিন্তাভাবনা ছাড়া কোনো পরিকল্পনা তৈরি সম্ভব নয়। সরকারি দলের কার্যনির্বাহী সভায় অথবা মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে যেসব বিষয় আলোচিত হয়, তা সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বা অন্যভাবে জানাজানি হয়ে যায়।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের অনেক সিদ্ধান্তই গোপন থাকে না। কিন্তু সরকারের অদৃশ্য মন্ত্রণাদাতা থিংক-ট্যাংক বা বুদ্ধিভান্ডারের লোকদের সলাপরামর্শের কথা বাইরে ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাঁরা সংখ্যায় হাতেগোনা কয়েকজন।
বুদ্ধিভান্ডারিদের বৈঠক কোনো বড় হলঘরে বা সভাকক্ষে হয় না। তাঁদের বৈঠক হতে পারে কারও বাড়ির ভেতরের বসার ঘরে, ডাইনিং টেবিলে, বাড়ির পেছনের লনে, কোনো পুকুর পাড়ে অথবা অন্য কোনো নির্জন স্থানে; যেখানে সংবাদকর্মী তো দূরের কথা, একটি মাছিও যেতে পারে না। সুতরাং জানতে পারে না তাঁরা কী সব বুদ্ধি আঁটছেন। মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠক বা দলের নির্বাহী পরিষদের সভার চেয়ে থিংক-ট্যাংকের অপ্রত্যক্ষ ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়, তার মূল্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
প্রকাণ্ড সব দেশ, যার ক্ষমতা বিধাতার চেয়ে বহু গুণ বেশি, যারা কোনো অতি দুর্বল দেশের বিরুদ্ধে ‘গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র আছে’—এই মিথ্যা অভিযোগ এনে হামলা চালায় এবং দখল করে নেয়, সেসব দেশও শুধু নীতিনির্ধারক ও থিংক-ট্যাংকের বুদ্ধি দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা ভিন্ন। এখানে সরকারকে আগ বাড়িয়ে বুদ্ধি দেওয়ার আরও কিছু মানুষ আছে, যেমন—ভ্রাম্যমাণ বুদ্ধিদাতা, বিনি পয়সার বুদ্ধিফেরিওয়ালা ও উপসম্পাদকীয় লেখক। শেষোক্ত ব্যক্তিরা হপ্তায় একবার বা দুবার বুদ্ধি নিয়ে সরকার ও পাঠকের কাছে হাজির হন।
চারদলীয় জোট সরকারের বুদ্ধির ফ্যাক্টরি ছিল বায়ু-বাড়ি নামক এক ভবনে। সেখানে যে বুদ্ধি উ ৎ পন্ন হতো, তার কাছে মন্ত্রিপরিষদ বা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিচার-বিবেচনার কোনো মূল্যই ছিল না। বাংলা ভাষার ভাইজান কী করবেন, দেশের কোন কোন জায়গায় মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হবে, বিচারপতিদের চাকরির বয়স বাড়ানোর দরকার কি না, কাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হবে এবং কত লোক নিয়ে গঠিত হবে নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগের ছোঁয়া যে অফিসারের গায়ে আছে, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে কোথায় বা ওএসডি করা হবে—সেসব সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদের সভায় হতো না। সব সিদ্ধান্তই অলৌকিক নির্দেশের মতো বায়ু-বাড়ি থেকে আসত। বাস্তবায়ন করতে হতো সরকারকে।
ওই ভবনের প্রভু বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে ২০২৫-এর আগে কোনো ব্যাটার সাধ্য নেই, বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতা থেকে সরায়। রহমান ভ্রাতৃদ্বয়কে যে আয়াতুল্লাহ খোমেনি বা নেতাজি সুভাষের মতো পরবাসে থাকতে হবে বহুকাল, তা দলের নেতারা কল্পনাও করেননি। তাঁর বুদ্ধির ব্যাপারে দেশের মানুষ ও বিদেশের মানুষ কী ভাবছে, তা ভাইয়া একটু ভেবে দেখারও প্রয়োজন মনে করেননি। এখন ভাগ্যের হাতে ভাইয়াকে সঁপে দিয়ে তাঁর কৃপাভাজনেরা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলছেন: মারে আল্লাহ, রাখে কে?
চারদলীয় জোট সরকারের বুদ্ধির একটা ঠিকানা ছিল, বুদ্ধি একটি ভবন থেকে বেরোত। মহাজোট সরকারের বুদ্ধির উ ৎ স কোথায় বা ঠিকানাটি কী, ডাকপিয়নও তা বলতে পারবেন না। তবে বর্তমান সরকারের বুদ্ধি তেজের দিক থেকে আরও প্রখর এবং পরিমাণের দিক থেকে আরও প্রচুর। ভ্যানে তরিতরকারি নিয়ে ঘোরা ফেরিওয়ালাদের মতো আওয়ামী লীগের বুদ্ধির ফেরিওয়ালারা দলের নেতাদের এত বেশি বুদ্ধি দান করেন যে বুদ্ধির ভারে আওয়ামী লীগ প্রায় চ্যাপটা হওয়ার জো! তবে দল এত বড় ও শক্ত যে সহজে চ্যাপটা হবে না—বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হতে পারে। আওয়ামী লীগ রবীন্দ্রভক্ত দল। তাদের বুদ্ধির ফেরিওয়ালাদের জন্য দূরদর্শী গুরুদেব অনেক আগেই অর্থবহ গান লিখে রেখে গেছেন। সেই সংগীত প্রতিদিন গীত হয় তাঁদের কণ্ঠে:
‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা
প্রভু, তোমার পানে, তোমার পানে, তোমার পানে।
ধায় যেন মোর সকল গভীর আশা
প্রভু, তোমার কানে, তোমার কানে, তোমার কানে।’
এই গান আমি সমবেত কণ্ঠে কোরাসের মতো গাইতে শুনেছি ১৯৭২-৭৫ খ্রিষ্টাব্দগুলোতে। এই গান প্রভুর কানে তখনো গেছে, এখনো যায়। ভালোবাসার প্রতিদান তাঁরা পান। একটি বড় পদ, রাজউকের খতিয়ানে একটি প্লট, বিদেশ ভ্রমণ, বড় ব্যবসার বন্দোবস্ত প্রভৃতি।
এসব বুদ্ধির ফেরিওয়ালার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেল প্রথমবার ১৫ আগস্ট। ৩২ নম্বর থেকে প্রবাহিত রক্তের স্রোতে রবীন্দ্রসরোবর কানায় কানায় ভরে গেল, তাঁদের গলা দিয়ে আহ্ শব্দটা বেরোল না। ১৭ আগস্ট আমি বঙ্গভবনে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো কোনো সদস্যকে দেখেছি; কিন্তু তাঁদের মুখটি দেখিনি, দেখেছি তাঁদের চকচকে দাঁত, যে দাঁত হাসে। তাঁদের মুখ থাকলে সে মুখে দুটি চোখও থাকত। চোখ থাকলে সে চোখে দুই ফোঁটা পানিও থাকত। পঁচাত্তরে আমি মুখহীন মানুষ দেখেছি, ধড়সর্বস্ব মানুষ, তাতে মুখটি ছিল না, মুখ থাকলে সে মুখ দিয়ে কথা বেরোত, প্রতিবাদ বেরোত। বাকশাল গঠনে বাড়তি বুদ্ধি সাপ্লাই দিয়েছিলেন যাঁরা, নতুন পরিস্থিতিতে তাঁরাও কী সুন্দর খাপ খাইয়ে নিলেন। ভাগ্য খুলে গেল। এবার ধরলেন অন্য গান: ‘তোরা যে যা বলিস ভাই/ আমার সোনার হরিণ চাই।’ তারা আজও আছেন, মানুষ হিসেবে নয়—মন্ত্রীর পদমর্যাদায়।
বাংলাদেশে যখন যাঁরা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তাঁরা একটা কথা খেয়াল রাখেন না যে কোনো কোনো দুর্যোগের মুহূর্তে বাংলার মানুষের শুধু শরীরটা থাকে, গলা থেকে ওপরের অংশ উধাও হয়ে যায়। অর্থা ৎ মুখটা থাকে না। মুখ থাকলে প্রতিবাদ করা যেতে পারে, শরীর তো কথা বলে না। প্রিয় শাসকের বিপর্যয় দেখেও দুঃখ হয় না, করুণার উদ্রেক হয় না কৃপাজীবীদের। এমন অকৃতজ্ঞ বেইমান নিমকহারামও আছে যে একদা উপকারীর সর্বনাশ দেখে আনন্দই পায়। তাদের রক্তে কৃতঘ্নতার উপাদান এত বেশি যে অন্যের ক্ষতি দেখে তাদের বগল আর বাজানো লাগে না—একা একাই বেজে ওঠে দৈব বাদ্যযন্ত্রের মতো। সেটা আমরা দেখেছি ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে।
বর্তমান সরকারের বুদ্ধির ফেরিওয়ালারা শুধু নীলক্ষেত, গুলশান, বারিধারা দিয়ে ঘোরাফেরা করেন না। বিশেষ করে, ভ্রাম্যমাণ বুদ্ধিদাতাদের গতিবিধি ভারত মহাসাগরের কিনারা পর্যন্তও নয়, আটলান্টিকের এপার-ওপার; ওদিকে প্যাসিফিক ও ওশেনিয়া। দেশের মধ্যে ভোট কমল তো কুচ পরোয়া নাই, পরদেশিদের পা জড়িয়ে ধরে হলেও হাতে রাখা দরকার। বিদেশি এয়ারলাইনস দুই পয়সা কমিয়ে নিচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ বুদ্ধিদাতারা ছুটছেন কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে। কোনো ডেপুটি সুপার পাওয়ারের প্রাদেশিক সরকারপ্রধানের কাছে মন্ত্রী পদমর্যাদার পরামর্শদাতাদের ধরনা দিতে পাঠানো হয়। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র!
যাক গে ওসব। সরকারের বুদ্ধিভান্ডারের কথা বলছিলাম। বুদ্ধির আবার কয়েকটি গ্রেড আছে—এ গ্রেড, বি গ্রেড ও সি গ্রেড অর্থা ৎ কাঁচা বুদ্ধি, আধা পাকা বুদ্ধি ও পাকা বুদ্ধি। এ গ্রেডের বুদ্ধিটা ঝুনা নারকেলের মতো পাকা। বি গ্রেডের বুদ্ধি ডাঁসা পেয়ারার মতো—না বেশি পাকা না কাঁচা এবং সি গ্রেডের বুদ্ধিটা বেআক্কেলের বুদ্ধির চেয়ে সামান্য সরেস।
সি গ্রেডের বুদ্ধিই বাংলাদেশে বেশি প্রয়োগ বা এস্তেমাল হয়। দৃষ্টান্ত: বিরোধী দলের ও তাদের ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতাকে কোনো খুনের মামলায় জড়ানো; কিংবা হরতালের মধ্যে বিরোধী নেতাকে পিটিয়ে লাশ বানানো; অথবা হরতাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিরোধী দলের অফিসে পুলিশ ঢুকিয়ে বিশ্রামরত কর্মীদের; বিশেষ করে, মেয়েদের বেদম পিটিয়ে জখম করা প্রভৃতি। এসব পরিকল্পনা বেআক্কেল বুদ্ধিদাতাদের মস্তিষ্কপ্রসূত।
দ্বিতীয় গ্রেডের বুদ্ধির জঘন্য দৃষ্টান্ত ২১ আগস্ট গ্রেনেড বর্ষণ এবং সেই নারকীয় ঘটনার চরম বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি, জজ সাহেবকে আসামি মিয়াতে পরিণত করা। বুদ্ধিওয়ালারা বুঝতে পারেননি, এই রহস্যময় পৃথিবীতে নারী হঠা ৎ পুরুষে এবং পুরুষ কখনো নারীতে রূপান্তরিত হতে পারে, কিন্তু জজকে আসামিতে রূপান্তর ঘটালে সে রূপান্তর বেশি দিন টেকে না।
অবশ্য আমাদের এমনই ভাগ্য যে যখন যা বলা হবে, তা-ই বিশ্বাস করতে হবে। বাংলার ভাইদের লাশ গাছে ঝুলিয়ে প্রদর্শনের ক্ষমতাটা ছিল, পৃষ্ঠপোষকতা ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের বাইরে, তখন ৬০-৭০টি জেলায় একই সময় বোমা ফাটায় এত নৈপুণ্য ও অত বড় নেটওয়ার্ক উগ্রবাদীরা অর্জন করেছে—তা বাংলাদেশের কোনো বোকাও বিশ্বাস করে না। কিন্তু উপমহাদেশে কারও কিছু বিশ্বাস করা না-করায় কিছুই যায় আসে না। যা ঘটবে এবং সে সম্পর্কে যা রটনা করা হবে, তা আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে। বিশ্বাস না করলে গলায় গামছা দিয়ে হলেও বিশ্বাস করানো হবে।
এ গ্রেডের অপ্রকাশ্য বুদ্ধিদাতাদের মাথা চাণক্য, নিউটন বা আইনস্টাইনের চেয়ে বেশি উর্বর। পিলখানার পৈশাচিকতা এ গ্রেডের কাজ। এক ঢিলে দুই পাখি শেষ: সেনাবাহিনী ও বিডিআর দুটোই দুর্বল হয়ে গেল। খালেদা জিয়াকে অত তাড়াতাড়ি বিনা পয়সার বাড়ি থেকে আদালতের রায়ের মাধ্যমে বিতাড়িত করা, অতি দ্রুত ওই বাড়ি ডেমোলিশ করা, তাহের হত্যা মামলার পুনর্বিচার, পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিল, বিস্ময়কর দ্রুততার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান পুনরায় রচনা করা এবং পঞ্চদশ সংশোধনী পাস—এ গ্রেডের বুদ্ধির ফসল। কিন্তু বেশি বুদ্ধি হলো বেলুনের মতো। মাত্রার বাইরে ফুঁ দিলে তা প্রচণ্ড শব্দে ফেটে যায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বেলুনটি এখনো ফাটেনি—ফাটবে, দেরিতে হলেও। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশের বেলুন ফেটে গেছে।
মাত্র আড়াই বছরে এত বেশি বুদ্ধি প্রয়োগের প্রয়োজন ছিল না। গণতন্ত্রে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার পদ্ধতি খুব সহজ। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা যেসব মন্দ কাজ করেছে, ঠিক তার বিপরীত কাজগুলো করা। জনগণ এমনিতেই তখন তাদের বর্জন করে। কিন্তু হাতুড়ি পিটিয়ে চাতুরী করে কাউকে ধ্বংস করতে চাইলে উল্টো ফল ফলে। আইয়ুব-মোনায়েম করতে গিয়েছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে আদালত বসিয়ে, ইয়াহিয়া করতে গিয়েছিলেন কামান দেগে। একটি সময় ছিল, ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যেত। জার্মানিতে হিটলার, ফিলিপাইনে মার্কোস, স্পেনে ফ্রাঙ্কো, পর্তুগালে সালাজার যা পেরেছিলেন, এখন তা সম্ভব নয়—বিদেশিদের সর্বাত্মক সাহায্য নিয়েও সম্ভব নয়।
রোববার বাংলাভিশনকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি ‘ডুবন্ত তরী’, এটা শেষ হয়ে যাবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে তরী শুধু দুটি নয়। এখানে নানা রকম তরী আছে—ছান্দি নৌকা, পানসি, গয়না, সাম্পান। তার যে কোনোটিতে লাফিয়ে উঠবে যাত্রী।
বিএনপি ডুবন্ত তরী কথাটা অর্থহীন নয়। কারণ, আগের দিনই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলার কথা পুনঃপ্রচারিত হয়েছে। বুদ্ধিদাতাদের পরামর্শে ‘অতি দ্রুত’ ওই মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে। বেগম জিয়ার সাজা হলে, ক্যান্টনমেন্ট তো আগেই ছেড়েছেন, এবার তিনি কাশিমপুরের বাসিন্দা হবেন। তাতে বিএনপি শেষ হবে। আর তখন তাঁর জীবনের পরম পুলক অনুভব করবেন জেনারেল এরশাদ। বিএনপির সময় সাজার কারণে তিনিও একবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। বেগম জিয়া কাশিমপুর গেলে এরশাদের অন্তিম দিনগুলো আনন্দঘন হয়ে উঠবে। তিনি গাইবেন:
‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।’
বেগম জিয়া জেলে গেলে নয়াপল্টনে নেমে আসবে কবরের নীরবতা। ওদিকে বিয়েবাড়ির মতো মরিচ-বাতি জ্বলে উঠবে বনানী, তোপখানা রোড ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। চিত্ত নেচে উঠবে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও সাম্যবাদী দলের নেতাদেরও। খালেদাবিহীন ’৮৮ মার্কা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাবে ২০১টি, জাতীয় পার্টি ৪৯, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ প্রত্যেকে ২১টি করে, সাম্যবাদী দল ও আওয়ামী ওলামা লীগ অবশিষ্ট আসন। সেই ‘সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদবিরোধী সরকার’ হিন্দুদের অর্পিত সম্পত্তি ও তাদের আবাদি জমি যেটুকু আছে, নিজেদের মধ্যে সেক্যুলার পদ্ধতিতে বণ্টন করে নিলে বলার কেউ থাকবে না।
বুদ্ধি দুই প্রকার: সুবুদ্ধি ও কুবুদ্ধি। কেউ সুবুদ্ধি প্রয়োগ করলে তার ও অন্যের জীবনে সুফল বয়ে আনে। কুবুদ্ধি ডেকে আনে বিপর্যয়।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.