এখন টিসিবির ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ-দাম বাড়িয়ে সম্মতি আদায়

প্রতিবছর পবিত্র রমজানের সময় বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দেয়, এবার বেশ আগে থেকেই তার আলামত দেখা যাচ্ছিল। আগেই দাম বাড়িয়ে দিলে রমজান মাসে আর নতুন করে দাম বাড়ানোর দরকার হবে না—ব্যবসায়ীরা এই বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এখন দেখা গেল, কথাটা সর্বাংশে ঠিক।

বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকায় পৌঁছানোর পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা সেটাকেই ন্যায্য দাম বলে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি আদায় করে নিয়েছেন। বাজারে চিনির দাম ৭০ থেকে ৭৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা দয়া করে কয়েক টাকা কমিয়ে দর ঠিক করেছেন ৬৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা যে সেটা মানবেন, এমন কোনো কথা নেই।
পবিত্র রমজান শুরুর আগেই বাজারে ডাল, পেঁয়াজ, ডিম ও দুধের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের মাথা-পিঠে হাত বুলিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি জোরেশোরে চালু করতে হবে সরকারের নিজস্ব বিপণনপ্রতিষ্ঠান টিসিবির কার্যক্রম। সম্প্রতি তাদের মাধ্যমে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী তার সুফল ক্রেতাদের পাওয়ার কথা।
কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেতে হলো। গত মঙ্গলবার ডিলারদের কাছে পণ্য সরবরাহের সময় ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের ডাল ও খেজুর গছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা উচিত। কর্মকর্তারা তা না করে বরং উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে দেখা যায়, কিছু পণ্য সত্যিই নষ্ট। কর্তৃপক্ষ পরে স্বীকার করে যে দীর্ঘদিন গুদামে থাকার কারণে কিছু পণ্য নষ্ট হয়ে থাকতে পারে।
শুধু নষ্ট নয়, ডিলাররা বলছেন, খেজুর গত বছরের, বাজারে এর দর ৪০ টাকা। টিসিবি সেই খেজুরই বিক্রি করতে চাইছে ৫৫ টাকা দরে! ডালও নিম্নমানের। এসব অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। মানুষ কি নষ্ট খেজুর আর নিম্নমানের ডাল খাবে? কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী যদি কিছু খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো বাজারে চালান না করাই উচিত। সরকারের কর্তব্য হলো মানুষকে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। টিসিবির পণ্য কিনে ক্রেতাদের যেন অনুশোচনা করতে না হয়।
বাজার তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা ও শক্তি বাড়ানো হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা দরকার। অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে বাধাবিপত্তি দূর করতে হবে। পথে পথে ট্রাক থামিয়ে দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এখন থেকেই কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
টিসিবির সামনে কঠিন পরীক্ষা। ডাল, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা প্রভৃতি পর্যাপ্ত পরিমাণে ও কম দামে সহজলভ্য করতে হবে। এ জন্য দরকার টিসিবিকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা ও তার দক্ষতা বৃদ্ধি। এই মুহূর্তে নিজেদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার চেয়ে বড় দায়িত্ব আর কিছু নেই।

No comments

Powered by Blogger.