আয়োজন-দু চাকায় ডানা মেলে... by খাদিজা ফাল্গুনী

স্বপ্ন তাঁদের দিগন্তে পাখা মেলার। না-ই বা থাকল ডানা, সাইকেলের চাকা তো আছে। দু চাকায় ভর করে সামনে এগিয়ে চলার স্বপ্নটাকে বাস্তবের ক্যানভাসে আঁকতেই তাঁরা ঝাঁক বাঁধছিলেন সংসদ ভবন চত্বরে। দিনটি ছিল ৮ মার্চ। বলছিলাম এবিসি রেডিওর আয়োজনে, বাংলাদেশি সাইক্লিস্ট, ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ ও ক্যাসপারস্কির সহযোগিতায় আয়োজিত সাইকেল র‌্যালি অংশগ্রহণকারী নারীদের কথা।

তাসমিয়া জাহান একটি বেসরকারি স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। সাইকেল চালানো শুধু তার শখ নয়, নেশাও বটে। সে বলে, ‘বাসা থেকে প্রায়ই সাইকেলে চেপে স্কুলে চলে যাই। সময়, অর্থ দুটোই বাঁচে।’ একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক তানজিন এসেছিলেন র‌্যালিতে সাইকেল চালাতে। একদিনে ২০০ কিমি সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন, ‘সাইকেল চালালে একটি মেয়ে লক্ষ্যকে ভালোবাসতে শেখে, নিজেই দায়িত্ব নিতে শেখে, কারও মুখাপেক্ষী হতে হয় না। আমাদের দেশে মেয়েদের বিনোদনের বড় অভাব। দলবেঁধে সাইকেল চালানো বিনোদনেরও জোগান দিতে পারে।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নিলুু বন্ধুর সঙ্গে জীবনে প্রথম সাইকেল চালাতে এসেছিলেন র‌্যালিতে। তিনি বলেন, ‘ভয় লাগছে, তারচেয়ে বেশি ভালো লাগছে। আরও বেশি করে সাইকেল চালাতে চাই। তবে ইচ্ছা এবং বাস্তবতার দাঁড়িপাল্লা এখনো সমান হয়নি বাংলাদেশে।’ গৃহিণী তিলকা বলেন, ‘ছোটবেলায় বরিশালে সাইকেল চালাতাম, এখনো ঢাকায় সাইকেল চালাই। কিন্তু পথেঘাটে ছুড়ে দেওয়া বাজে মন্তব্যের কোনো হেরফের হয়নি।’ নুর এ নাজিয়া বলেন, ‘রাস্তায় মেয়েদের সাইকেলে দেখলেই অনেকে ইচ্ছে করে গাড়িতে বসে ধাক্কা দেয়। নিম্নবিত্ত মানুষের দৃষ্টিতে সাইকেলে বসা মেয়েরা চমক হতে পারে। কিন্তু শিক্ষিতদের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভের দিয়া বলেন, ‘অনেকের ধারণা, যাদের গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই এবং যারা শিশু, শুধু তারাই সাইকেল চালায়। এ ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে সম-অধিকারের চর্চাটা কেতাবিই রয়ে যাবে।’
বিদেশিনী আনিকা বেগম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন ১৪ বছর হলো। তিনি বলেন, সরকারের পরিবহননীতিতে রিকশার কথা থাকে, জ্বালানি সমস্যার কথা থাকে, কিন্তু সাইকেলের কথা থাকে না। এ বিষয়ে ভাবতে হবে এখনই। কারণ দিন বদলে যাচ্ছে, প্রয়োজনের ধরনও বদলে চলেছে। শুধু হাইওয়ে নয়, সাইকেলেরও লেন প্রয়োজন।
এবিসি রেডিওর গবেষণা ও উন্নয়ন প্রযোজক আশীফ ইন্তাজ সেই বদলের কথাই শোনালেন সবশেষে। বললেন, নারী দিবস, নারীর স্বাধীনতা নিয়ে সেমিনার, আলোচনা তো অনেক হলো, মাঠে নামার সময় এখন। নারীরা আজ দেখিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা চাইলেই পারেন। আমাদের যাত্রা আজ শুরু হলো মাত্র। এ যাত্রা নিয়ে যেতে চাই আরও অনেক দূর। শুধু প্রয়োজন নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার একতা এবং সহযোগিতা।

No comments

Powered by Blogger.