ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ-পায়ে পা লাগায় ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা কয়েক রাউন্ড গুলি এবং কয়েকটি পেট্রল বোমা ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এ সময় নীলক্ষেত মোড় ও আশপাশের এলাকা একরকম 'রণক্ষেত্রে' পরিণত হয়।

রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হলেও আশপাশের সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। এ ঘটনায় পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র সায়েম, বাতেন, শুভ নীলক্ষেতের একটি হোটেলে খাবার খাচ্ছিলেন। ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে রাতের খাবার খেতে যান। তাঁরা চেয়ারে বসার সময় পায়ে পা লাগায় ঢাবি ছাত্রদের সঙ্গে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা এফ রহমান হলের ছাত্রদের মারধর করে। ঢাবি ছাত্ররা নিজেদের ছাত্রলীগকর্মী পরিচয় দিলে ঢাকা কলেজের ছাত্ররাও একই পরিচয় দেন। এ সময় ঢাকা কলেজের ছাত্ররা ফোন করে তাঁদের সহযোগীদের ডেকে আনেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় তাঁরা ঢাবি ছাত্রদের মারধর শুরু করলে ঢাবি ছাত্ররা দৌড়ে এ এফ রহমান হলের দিকে চলে যান। এরপর ওই হল থেকে ছাত্ররা বের হয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল থেকে শত শত শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। এরপর রাস্তায় দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইট-পাথর নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ছাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁরা হলেন- উপাচার্যের ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আনোয়ার হোসেন মজুমদার, আইন বিভাগের ছাত্র শরীফুল ইসলাম শুভ, বিবিএর ছাত্র জামান, লোকপ্রশাসন বিভাগের শাহরিয়ার, ইসলামের ইতিহাসের শামসুল হুদা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের আবদুর রহমান ও রনি, বাংলার আবদুর রহিম, ধর্ম ও সংস্কৃতির ছাত্র মামুন, ইমদাদুল হক, মনির, কামাল খান ও অভি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফির সিদ্দিক আহতদের দেখতে রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে বলে তিনি জানান।
প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী বলেন, 'এ ধরনের ঘটনা ন্যক্কারজনক। ঢাকা কলেজের উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা পিস্তল, চাপাতিসহ সব ধরনের দেশি-বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আমি ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হামলাকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনিকভাবেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করব।'
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আয়েশা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনার খবর পেয়েই আমি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীকে ফোন করে সহযোগিতা চাই। ১০ জন শিক্ষককে ঘটনাস্থলে পাঠাই। ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'
ঘটনার শুরুতে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে রাত ১২টার পর পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্যও আহত হন।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, প্রথম দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স ছিল না। পরে ফোর্স বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের কমপক্ষে ১০ সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.