আত্মহত্যা সমাধানের পথ নয়-বরিশালে আপত্তিকর ভিডিও

সমাজ, লোকলজ্জা বা ক্ষোভ—এসব কি জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে? তবে এসব কারণে কেন জীবনটাকেই শেষ করে দেওয়া! বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্রী সুপর্ণা বালা যে কারণে আত্মহত্যা করেছেন, তা আমাদের আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল যে আত্মহত্যার এই প্রবণতা থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারেনি। আর যেসব কারণে এই আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটে, সেই বিষয়গুলোর দাপট যেন দিন দিন বেড়ে চলেছে।

সুপর্ণা কোনো অপরাধ করেননি, অপরাধ করেছেন তাঁর বন্ধু নজরুল ইসলাম, বন্ধুত্বের সুযোগে যিনি সুপর্ণার কিছু আপত্তিকর ভিডিও তুলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, স্বেচ্ছায় নয়, জোর করেই তোলা হয়েছে এ ভিডিও, আবার তা মুঠোফোনের মাধ্যমে ছড়িয়েও দিয়েছেন। সুপর্ণার স্বামী জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর ‘লজ্জায়, ক্ষোভে আর দুঃখে’ তিনি আত্মহত্যা করেন। অপরাধ, অপকর্ম ও অনৈতিক কাজ—সবকিছুর দায় এখানে নজরুলের, কিন্তু নিজের জীবনটাকে শেষ করতে হলো সুপর্ণাকে। লজ্জার সব দায় যে শুধুই মেয়েটির! আমাদের সমাজ কবে এই মানসিকতা থেকে মুক্তি পাবে? কবে একটি মেয়ে এ ধরনের অন্যায়ের শিকার হলে আত্মহত্যার পথে না গিয়ে সাহস করে অপরাধীর বিচার চাইবে?
মেয়েদের আপত্তিকর ভিডিও তুলে তা প্রচার করার জঘন্য প্রবণতা যেন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। স্বামী, বন্ধু বা প্রেমিক—এ ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের লোকেরা যেমন এমন অপকর্মগুলো ঘটিয়ে যাচ্ছে, তেমনি ধর্ষণকারীরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষক পরিমল তাঁর ছাত্রীকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হননি, ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আপত্তিকর ভিডিও তোলা ও প্রকাশের কারণে এর আগেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই অপকর্মকে থামানো যায়নি বা যাচ্ছে না। জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এসব ঠেকানোর একমাত্র পথ। সুপর্ণার ভিডিও তোলা ও প্রকাশের সঙ্গে জড়িত নজরুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ, গ্রেপ্তার হয়েছেন ভিকারুননিসার শিক্ষক পরিমলও। এঁদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
সুপর্ণা আত্মহত্যাকেই সমাধান ভেবেছেন, কিন্তু এটা সমাধানের পথ নয়। ভিকারুননিসার ঘটনাটি প্রমাণ করেছে, এ ধরনের অপরাধের ঘটনা চেপে যাওয়ার চেয়ে সাহস করে বিচার চাওয়া পথেই এগোতে হবে। কাজটি সহজ নয়, কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.