সরকার লাগাম ছেড়ে দিলে চলবে কী করে?-বাসভাড়া বেড়েই চলেছে

বাসভাড়া বৃদ্ধির চিরায়ত অজুহাত হলো তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সরকার যতবার তেলের দাম বাড়ায়, ততবার পরিবহনভাড়াও বাড়ে। কার্যত, তেলের মূল্যবৃদ্ধির থেকে বেশি হারে বাড়ানো হচ্ছে বাসের ভাড়া। এ বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা সহযোগীর। ব্যয় বৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ এক যাত্রীর ভাষায় তাই পরিস্থিতিটা এমনই যে ‘দেখার যেন কেউ নেই’।


সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তেলের দাম এক টাকা বাড়লে ভাড়া বাড়ার কথা এক পয়সা। কিন্তু গত রোববারের প্রথম আলোর সংবাদ অনুসারে, ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে যেখানে ভাড়া বাড়ার কথা ১০১ টাকা, সেখানে বেড়েছে ১৩০ টাকা। ঢাকা-বগুড়া পথে ভাড়া ৮০ টাকা বাড়ার কথা হলেও বেড়েছে ১০০ টাকা। এভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি ভাড়ার পরিমাণ কিন্তু কোটি কোটি টাকা। নিয়মিত যাতায়াতকারী নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের জন্য বাড়তি ভাড়াটা শাকের ওপর আঁটির বোঝা হয়ে ওঠে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখিয়েছে, কীভাবে সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে মালিকদের অনুকূলে ভাড়া বাড়ানো হয়। বাসের বার্ষিক ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় সরকারের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ। বিআরটিএর এই কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধিসহ থাকেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিক-প্রতিনিধিরা। কার্যত, তাঁরা একজোট থাকেন আর সরকারি প্রতিনিধিরাও যাত্রীস্বার্থ উপেক্ষা করে মালিকদের কথায় সায় দেন। ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় নৌপরিবহনমন্ত্রীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তাঁর পরিবারেরই রয়েছে বিরাট পরিবহন ব্যবসা। একই সঙ্গে তিনি শ্রমিকনেতা হওয়ায় শ্রমিকের নামে মালিকের স্বার্থই রক্ষা করছেন। বিআরটিএর কাজ হলো, তাঁদের বাড়তি মুনাফার খাই মেটানোর বৈধতা দিতে ভাড়া বাড়িয়ে যাওয়া।
ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধির এই কৌশলটিকে বলা যায় শুভংকরের ফাঁকি। তাঁরা বাসের ক্রয়মূল্য বেশি দেখান, বাড়িয়ে ধরেন খুচরা যন্ত্রাংশের খরচ, শ্রমিকের বোনাস-বেতনও বাড়িয়ে দেখানো হয়। বাসের মেয়াদ এবং যাত্রী বহনের মাত্রাও কমিয়ে দেখিয়ে খরচ অনুপাতে মুনাফা কমিয়ে দেখানোর কৌশলও বাদ পড়ে না। সরকারি সংস্থা ও কর্তাব্যক্তিরা এসব দেখেও না দেখার ভান করেন।
কার্যত, যাত্রীদের যেহেতু কোনো সংগঠন নেই, তাই তাঁরা সরকারের সুবিচারের প্রত্যাশায় থাকেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সুবিচারের কোনো নমুনা দেখা যায়নি। আশা করি, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ বদলাবে।

No comments

Powered by Blogger.