মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে সংশয়

অনেকগুলো ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিত করা সাপেক্ষে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বৈদেশিক ঝুঁকির দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্জনের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছে।


২০১০-১১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব কথা বলেছে। সংস্থাটি বলছে, স্বাভাবিক অনুকূল আবহাওয়া বজায় থাকা, দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্বল্পতার আরও উন্নতি, প্রয়োজনীয় আর্থিক ও বস্তুগত উপকরণের সময়মতো ও পর্যাপ্ত সহজলভ্যতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকা সাপেক্ষে জাতীয় বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন নয়। তবে বৈদেশিক ঝুঁকি বাড়লে এ হারের কিছুটা হেরফের হতে পারে।
একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজেটে প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতির হারও ধরে রাখা যাবে না বলে মত প্রকাশ করেছে। জাতীয় বাজেটে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল সাড়ে সাত শতাংশ। যদিও গত ১১ মাসে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানোর পরও অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে সাত শতাংশে নামিয়ে আনা কঠিন হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবেও ঘাটতি দেখা দেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল সোমবার বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকব্যবস্থায় সরকারের ঋণ হ্রাস পায়। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের ব্যাপক বৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকারের ব্যাংকঋণ ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ে। চলতি বছর এই ঋণ বাড়ার প্রবণতা আরও বেশি।
এ পরিস্থিতিতে চাহিদা প্রশমন ও ঋণ পরিশোধে সরকারি খাতে বৃহত্তর অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নে সার্বভৌম ঋণ তথা বন্ড ছেড়ে বিদেশ থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারণা, চলতি অর্থবছর প্রবাসীদের পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) বেশি বাড়বে না। গত অর্থবছরের মতো এবারও এই খাতে প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কে অপরিবর্তিত থাকবে। গত অর্থবছর প্রবাসী-আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
গত অর্থবছর আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪০ শতাংশের ওপরে। এটা হয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা-পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে।
কিন্তু এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার আমদানি ও রপ্তানি—উভয় ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকার প্রাক্কলন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে টাকার বিনিময় হার কিছুটা চাপে থাকায় অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমবে। বর্তমানে রিজার্ভ সাড়ে ৯০০ কোটি ডলারের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, স্বস্তিদায়ক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ হলো এক হাজার ১০০ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর মূলধন এবং আর্থিক হিসাবের নিট ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ায় সার্বিক লেনদেনের ভারসাম্যও ঋণাত্মক হয়। তবে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ইতিবাচক ছিল। কিন্তু এবার প্রবাসী-আয় সামান্য বৃদ্ধির পরও বাণিজ্য, সেবা ও আয় হিসাবের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যও ঘাটতির দিকে যাবে।
এ ছাড়া দেশের মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ পরিস্থিতি, ব্যাংকিং খাতের কার্যদক্ষতা, কৃষিঋণ, সরকারের অর্থায়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এবং দেশের আর্থিক খাতের সার্বিক তথ্য এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে এবার প্রথমবারের মতো অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দায় এবং আমানত পরিস্থিতি, ঋণ ও লিজ, খেলাপি ঋণ ও লিজ পরিস্থিতিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ও অগ্রগতির তথ্য সংযোজিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে।

No comments

Powered by Blogger.