ঈদের আগে বেতন বোনাস-নিশ্চিত করুন পোশাক শ্রমিকদের পাওনা

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে একটি অশুভ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। তাঁরা ধারণা করছেন, গত বছর ঈদের আগে বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে যেখানে অল্পসংখ্যক কারখানায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল, সেখানে এ বছর সংখ্যাটি ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।


শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ৪১০টি কারখানায় এ সংকট দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে পোশাক তৈরির কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ মনে করছে, সমস্যাগ্রস্ত পোশাক কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে মূলত কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ অর্ডারের পরিমাণ কমে গেছে; দ্বিতীয়ত, ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে জুলাই মাসের বেতনসহ আরো একটি বেতন ও বোনাস প্রদানে মালিকদের ওপর চাপ পড়েছে। তবে আশার কথা হলো, রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পোশাকশিল্পে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতারা ঈদের আগেই বেতন ও বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সেটাই যেন হয়। প্রথমত, শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস কোনো দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়। এসব শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা। এ পাওনা নিয়ে কোনো দেন-দরবার করার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, মালিকদের যা মনে রাখা একান্ত কর্তব্য তা হচ্ছে, শ্রমিকদের সন্তুষ্ট না রেখে উৎপাদনে গতি আনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে সময়টি অতি স্পর্শকাতর। সামনে ঈদ। সারা বছরে ঈদ আসে সাধারণ শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে আনন্দে শরিক হওয়ার একমাত্র সুযোগ নিয়ে। এ সময় শ্রমিকদের বাকি-বকেয়া মেটানোর, বাকি রাখার সময় নয়। এমনিতেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এখনো সন্তোষজনক নয়। তার ওপর দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ রয়েছে তাদের মাথার ওপর। সুতরাং কোনো কারখানা মালিকের কোনো অজুহাতে শ্রমিকের বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ না করাকে আমরা সমর্থন করতে করি না। বাংলাদেশে অনেক পোশাক তৈরির কারখানা রয়েছে, যারা মুনাফার তুলনায় শ্রমিকের বেতন-মজুরি-বোনাস প্রদান করে থাকে কম। অর্থাৎ স্ফীত মুনাফার অংশ শ্রমিকরা ভোগ করে না। পোশাক তৈরির কারখানা মালিকরা যেসব প্রতিষ্ঠানকে লোকসানি বলে মনে করছেন, তাঁদের পক্ষ হয়ে অধিক লাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে হয় ঋণ নিয়ে অথবা সাবসিডি প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করুন। আমরা জানি, অনেক প্রতিষ্ঠান তার আয়-ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে প্রদর্শন করে না। সেসব প্রতিষ্ঠানের সত্যিকার পরিস্থিতি জানাও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠনের দায়িত্ব। মোদ্দা কথা, ঈদ সর্বজনীন। কারো বিলাসবহুল ঈদ উদযাপন হবে, আর সারা বছর শ্রম দেওয়া কোনো মানুষের ঈদ অর্থাভাবে থমকে যাবে_এ পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় তা দেখার দায়িত্ব মালিকদের সংগঠনগুলোর এবং একই সঙ্গে সরকারেরও। প্রত্যেক পোশাক শ্রমিকের ঈদ যেন আনন্দমুখর ও ন্যায্য পাওনা হাতে পাওয়ার মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়, তা সুনিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.