আলোচনা শুরু করতে বাধা কোথায়?-নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতা

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়টি যেমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, তেমনি এর ওপরই নির্ভর করছে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। এর সঙ্গে একদিকে নির্বাচন কমিশন, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রশ্নটি জরুরি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে যখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, তখন এই বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যে পৌঁছানোর কোনো বিকল্প নেই।


বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর বিদায়ী সংবর্ধনায় যেসব অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, সেই দিকগুলোকেও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল এবং দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এর বিরোধিতা করায় আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিএনপি বলে আসছে, দলীয় সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কর্মপরিধি বাড়ানো—এসব প্রসঙ্গ আলোচিত হচ্ছে। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা কঠিন। তবে কিছু শর্ত মেনে চললে সেটা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে কয়েক ধাপে নির্বাচন করা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা, নির্বাচন চলাকালে ইসির পরামর্শ অনুযায়ী সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় চলবে—নির্বাচনী আইন সংস্কার করে তা নিশ্চিত করা।
সিইসি তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন, তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে আশঙ্কা রয়েছে, তা দূর করতে মন্ত্রিসভা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার—এই চারটি মন্ত্রণালয়কে ইসির পরামর্শ মেনে কাজ করার যে প্রসঙ্গটি সিইসি উল্লেখ করেছেন, তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সব রাজনৈতিক পক্ষকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার মূল কারণ এই বিষয়গুলো নিয়ে অনিশ্চয়তা ও নানা আশঙ্কা।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এত দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ছাড়া নির্বাচনের বিরোধিতা করে এলেও দলটির প্রধান খালেদা জিয়া শনিবার বলেছেন, অন্তর্বর্তী বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাঁর দল আলোচনায় প্রস্তুত। অন্যদিকে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে। দুই পক্ষের মনোভাব যদি এই হয়, তবে এ নিয়ে আলোচনা বা সংলাপ শুরু করতে বাধা কোথায়?
দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাহীন রাখতে চাইলে আগামী নির্বাচন যেমন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে, তেমনি সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ও বিরোধী দল এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত এ ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছে দেশবাসীকে অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেবে, সেটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.