প্রতারিত হচ্ছেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা-প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করুন

প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ থেকে মানুষ প্রবাসে কর্মসংস্থানের জন্য ছুটছে। এ বিদেশ গমন বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন নয়। দেশে মানুষ যত বেড়েছে, কর্মসংস্থানের যত অভাব দেখা দিয়েছে, তত বেশি মানুষের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার তাগিদ তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থানের আশায় ভিটেমাটি বিক্রি করে, আপনজনদের পেছনে ফেলে ছুটছে বিদেশ-বিভুঁইয়ে কাজের সন্ধানে। আর এই বিদেশ গমনেচ্ছু সহজ-সরল মানুষগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই হচ্ছে প্রতারণার শিকার।


অভিনব সব প্রতারণার খবর প্রকাশ পাচ্ছে পত্রিকায়। অনেক ব্যক্তি প্রতারকচক্রের নতুন নতুন খপ্পরে পড়ছে। ইউরোপ বা অন্যত্র চাকরির প্রলোভন দিয়ে তাঁদের পাঠানো হচ্ছে নেপাল ও ভুটানে। এসব প্রতারণা শুধু ব্যক্তির দ্বারা হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িত থাকে বা তাদের দ্বারাই সংঘটিত হয়। যেমন_জাপান বাংলাদেশ থেকে সরকারি-বেসরকারি লোক দিয়ে প্রশিক্ষণের কথা ভাবতে শুরু করেছে। অমনি প্রতারণার ফাঁদ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫টি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাপানে লোক পাঠানো নিয়ে প্রতারণায় নেমেছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা জিটকোর আওতায় প্রশিক্ষণার্থী শ্রমিকরা সুযোগ পাবে। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সব ধরনের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে জাপান পাঠানোর নামে।
বিদেশে লোক পাঠানো নিয়ে নানা রকম প্রতারণার কথা আমরা জানি। যেমন_একটি বহুদিনের পরিচিত প্রতারণা হলো, কারো কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করে তাকে ছয় বা আট মাস বিলম্ব করিয়ে তারপর কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়া। এই মধ্যবর্তী ছয়-সাত মাস মোটা অঙ্কের টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করে আয় করা হয়ে থাকে। এটিই হলো সবচেয়ে ছোট ও সহনশীল প্রতারণা। কিন্তু এ প্রতারণার শিকার মানুষটা তার অর্থ ফেরত পায় ঠিক, কিন্তু এর মধ্যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। তার আইনগতভাবেও কিছু করার থাকে না। আমাদের বক্তব্য হলো, সরকার যদি জনগণের মঙ্গল চায়, তাহলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিদেশে লোক পাঠানোসংক্রান্ত সব ধরনের প্রতারণা, ছলচাতুরী এবং সব ধরনের অনিয়মকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন হলো বায়রা। এই বায়রার সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো চোখের সামনে নানা অপরাধ করে, বায়রার নীতিমালা লঙ্ঘন করে বহাল তবিয়তে টিকে থাকে কী করে। পত্রপত্রিকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বহু প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু বায়রাকে খুব কমই পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। সরকারের মনে রাখতে হবে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে এ দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। দেশের লাখ লাখ মানুষ যেমন বিদেশ থেকে কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাচ্ছে, তেমনি লাখ লাখ লোক প্রতিদিন বিদেশ যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ছুটছে। এরাও বিদেশ গিয়ে এ দেশে টাকা পাঠাবে। সুতরাং তাদের দেখভাল করা, প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা সরকারের অবশ্যপালনীয় কাজ। এ কাজে গাফিলতি নিজের পায়ে কুড়াল দিয়ে আঘাত করার সমান। সরকারের কাছে আমাদের প্রস্তাব, বিদেশ গমনেচ্ছু মানুষের সঙ্গে সব ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে প্রয়োজনে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.